মনিরুজ্জামান নরসিংদীঃ
নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন কাঠালিয়া ইউনিয়নে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বাড়িঘরে হামলা, মারধর, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (১৩ জুলাই) রাত নয়টার দিকে মাধবদী থানাধীন কাঠালিয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড দস্তরদী গ্রামের মোতালিব মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এঘটনায় মোতালিব মিয়ার ছেলে সেলিম (৩৩), সাব্বির (২০) ও মেয়ে হেপি আক্তার (২৪) গুরুতর আহত অবস্থায় আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে সরেজমিন দস্তরদী গ্রামের সেলিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেলিম ও তার পার্শ্ববর্তী ৭/৮ টি বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে পুরো ঘরের আসবাবপত্র,টিভি,ফ্রিজ, আলমারি,খাট ও ড্রেসিং টেবিল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
ঘরের বেড়া,চালা ও দরজাগুলো কুপিয়ে খন্ড খন্ড করে ফেলা হয়েছে।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রত্যক্ষদর্শী শাহিন মিয়া ও এলাকাবাসী বলেন, ঈদের দিন রাতে শাহিনের ভাই বিদেশ যাওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা নিয়ে দালালের বাড়ি যাচ্ছিলেন।এসময় হাবিবুর,সজীব, কামরুল ও মহসিন সিএনজি যোগে তার গতিরোধ করে তার সাথে থাকা ৫০হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
এঘটনায় পরদিন উক্ত চারজনকে আসামি করে মাধবদী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
এরই জের ধরে গতকাল রাত নয়টার দিকে একই এলাকার আব্দুস সাত্তারের ছেলে ডালিমের (৩৫) নেতৃত্বে আলামিনের ছেলে কাদির(৩০),হামিদ মোল্লার ছেলে হাবিবুর (২৬), মাসুদের ছেলে সজীব (২০), ইয়াকুবের ছেলে রিফাত (২০),হযরত আলীর ছেলে শাহজাহান (২৬), হান্নানের ছেলে কামরুল (২০),মনা মিয়ার ছেলে মহসিন (২১)ও মুছা মিয়ার ছেলে বারেক(৩৮) সহ প্রায় দেড় শতাধিক লোকজন দেশীয় অস্ত্রসহ সেলিমের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করাসহ ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে।এসময়তারা বাড়িতে থাকা সবাইকে এলোপাথাড়ি মারধর ও কুপিয়ে জখম করে।
এঘটনায় সেলিম, সাব্বির ও হেপিকে গুরুতর আহত অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
পরে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতেই তাদেরকে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তারা সেখান চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
মাথায় গুরুতর আহত সেলিমের স্ত্রী রত্না বেগম বলেন,ডালিম,স্বপ্ন, হাবিবুর ও কামরুলের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা প্রথমেই আমার স্বামির মাথায় কুপ মারে এবং এলোপাথাড়ি মারধর করে।আমরা এগিয়ে গেলে আমার দেবর সাব্বির ও ননদ হেপিকে বেদম মারধর করে। পরে আমাদের বাড়ির সবাইকে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করলে ভয়ে আমরা বাড়িঘর ফেলে পালিয়ে যাই। এ সুযোগে তারা আমাদের ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে টাকা পয়সা ও গহনা লুটপাট করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় রাতেই পুলিশকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। কিন্তু তারা পুলিশের সামনেই আবার আমাদের মারতে আসে। পরে পুলিশ তাদের একজনকে আটক করলে তারা পুলিশের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং আটককৃত ব্যাক্তিকে ছিনিয়ে নেয়। আমার স্বামি,দেবর ও ননদ মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
তারা আমাদের সবকিছু লুটপাট করে আমাদেরকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে।আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
হেনা বেগম কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন,ডালিমের নেতৃত্বে,স্বপন,কাদির, হাবিবুর ও কামরুলসহ প্রায় দেড় শতাধিক লোকজন নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়।এসময় ডালিম বলে হেয় বিদেশি।
হের ঘরে অনেক বিদেশি জিনিস আছে।এই বলে তাদের হাতে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়া কুবাইয়া আমার ঘরের দরজা ভেঙে ঘরের সকল জিনিস পত্র ভাংচুর করে এবং ঘরে থাকা জিনিসপত্র ও টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যায়।তার সাথে থাকা লোকজন আমাকে মারতে মারতে অন্য বাড়িতে নিয়ে যায়। এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে তাদেরকেও তারা মারধর করে। আমি তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।
প্রত্যক্ষদর্শী ষাটোর্ধ্ব এক মুরব্বি বলেন, হঠাৎ কয়েকশো লোকজন সেলিমের বাড়িতে গিয়ে তাদের মারধর শুরু করে। আমি এগিয়ে গিয়ে তাদের থামাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। আমি তাদেরকে বললাম দেশে আইন আছে।তারা যদি কোন অপরাধ করে থাকে তবে আইনানুগ ভাবে তাদের বিচার হবে।
এসময় তাদের সাথে আসা হাবিবুর নামের একজন আমাকে মাইরের কাঠ দিয়ে পায়ে দুই তিনটা বাড়ি মারে।
এব্যাপারে জানতে হামলা, মারধর ও লুটপাটের ঘটনায় নেতৃত্ব দাতা ডালিমের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।পরে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন সারাদিন থানায় ছিলাম।হামলা ও লুটপাটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাতো আর এক পক্ষে হয় না। আমাদের চারপাশে প্রায় ৫/৭ শত লোক আছে।তাদের কাছে জিজ্ঞেস করলেই সত্যটা জানতে পারবেন।
কাঠালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এবাদ উল্লাহ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,তারা আমাকে বিষয়টি অবগত করেছে। আমি তাদের আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রাকিবুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,আমি এধরনের একটা ঘটনার কথা শুনেছি। বিষয়টি তদন্তনাধীন রয়েছে।
তবে এব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি বিধায় অফিসিয়াল ভাবে কোন বক্তব্য দিতে পারছেন না বলে ও জানান তিনি।