নিজস্ব প্রতিবেদক
বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে নরসিংদী জেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত নরসিংদী পৌরসভা। খানাখন্দকে রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা এতোটাই নাজুক যে সামান্য বৃষ্টিতে ড্রেন উপছে পড়ে পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। এসকল সমস্যার কারণে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই নরসিংদী পৌরবাসী। বিশেষ করে রাস্তার খানাখন্দের কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনা।
দীর্ঘদিন ধরে শহরের বিভিন্ন সড়কগুলোর সংস্কার না করা অধিকাংশই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্ষায় পানি জমে এসব সড়ক মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ।
জানা যায়, রাজধানী ঢাকার অতি নিকটে বর্তমানে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প নগরী নরসিংদী পৌরসভাটি ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি ‘গ’ শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭৮ সালের ১ লা জুলাই ’খ’ শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে উন্নীত হয়েছে। এর পর ১৯৮৪ সালে এই শহরটি নরসিংদী জেলার সদর হিসেবে পরিচিত লাভ করে। এতে শহরের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলে ১৯৯৬ সেলের ২৬ আগস্ট নরসিংদী পৌরসভা ’ক’ শ্রেণীতে উন্নীত হয়। সমৃদ্ধ ঘটতে থাকে শিল্প সমৃদ্ধি নগরী হিসেবে।
একদিকে জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ অন্যদিকে রাস্তা, ড্রেন,কালভার্ট, ব্রিজ অন্যাদিকে আধুনিক বাস টার্মিনাল, পৌর শিশু পার্কসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মানের প্রয়োজনীয় দেখা দেয়।
স্থানীয়রা বলছেন, শহরের রাস্তাঘাটের একেবারেই বেহাল অবস্থা। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার ভিতরের রাস্তাগুলোও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। খানাখন্দে ভরা এসব রাস্তায় প্রতিদিন অটোরিকশা উল্টে গিয়ে যাত্রী আহত হচ্ছেন।
চালকরা জানান, এসব রাস্তায় যানবাহন চালানো খুবই কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ।
পৌর শহরের বাসিন্দা ফেরদৌস হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘পৌর শহরের রাঙ্গামাটি রোড, দত্তপাড়া রোডসহ প্রায় অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশা। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। আমরা যারা শহরে চলাচল করি তাদের অনেক সমস্যা হয় পাড়িয়ে বাসাবাড়ীতে যেতে হয়। বছরের পর বছর ধরে একই সমস্যা ভোগ করতে হচ্ছে। ড্রেনগুলোতে পলি জমে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে আবার অনেক গুলো সড়কগুলোর তুলনায় নিচু হওয়া সামান্য বৃষ্টিতে ড্রেন ভরে গিয়ে সড়কগুলো তলিয়ে যায় ফলে জলবদ্ধতার সৃআমরা এর সমাধান সৃষ্টি হয়। আমরা এর সমাধান চাই।
হাসানুজ্জামান সরকার নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, ‘নরসিংদী শহর অবহেলিত অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। একটু বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো নয়। পৌরসভার বেশিরভাগ রাস্তা খানাখন্দে ভরা। নারীরা রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারেনা। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে সমস্যা হয়।’আর মুসুল্লিদের কথা না বললেই নয়। ময়লা-আবর্জনাপূর্ণ পাড়ানোতো দূরে থাক শরিরে এক ফোঁটা গেলেই ওজু নষ্ট হয়ে যায়।তখন আর মসজিদে কিংবা নামাজ পড়া যায়না।
আতিকুর রহমান নামে একজন স্কুল শিক্ষক বলেন, ‘শহরে চলাচল অসম্ভব। সড়কে হেঁটে চলাচলেরও উপায় নেই। রাস্তা ভাঙাচোরা আর খানাখন্দ। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারে খারাপ। এছাড়া যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। দুই-তিন বছরে রাস্তায় কোনো কাজই হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে যা চলে সেটি চলার মতো না। খানাখন্দে ভরে থাকায় রিকশা-গাড়িতে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।’
সুমা দাস নামে কলেজগামী একজন ছাত্রী বলেন, নরসিংদীর সব রাস্তা-ঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।বর্তমানে সবচেয়ে বিপদে আছে পৌরসভার সাধারণ নাগরিকরা । সিএনজি অটোরিকশা খানাখন্দ রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় প্রতিদিন দুর্ঘটনায় পড়ছে। মানুষ আহত হচ্ছে।
এব্যাপারে নরসিংদী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম জানান, সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী করতে শিগগিরই মোবাইল মেইনটেন্যান্স কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।
নরসিংদী স্থানীয় সরকার (ভারপ্রাপ্ত) উপপরিচালক ও পৌর প্রশাসক মনোয়ার হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে সড়কগুলোতে এইসব খানাখন্দের আসন্ন দূর্গাপূজার পূর্বে অনেকটাই সংস্কার করা হয়ে যাবে। বাকী গুলো ট্রেন্ডারের মাধ্যমে দিতে হবে। আর ড্রেনগুলো অনেক পুরাতন তাই সেগুলো ভেঙ্গে নতুন করে করতে হবে। বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ময়লা আবর্জনা পৌরসভা লোক বাড়ী বাড়ী গিয়ে তুলে আনবে আর সেইগুলোই আমাদের পাঁচ নাম্বার ডাম্পিংয়ে নিয়ে ফেলা হবে।