নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশে আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি রেকর্ড সংখ্যক জনসমাগম ঘটাতে চায়। এ লক্ষ্যে দলটির নেতারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন। সরকার এবং সরকারে থাকা দলের পক্ষ থেকে বাধা আসতে পারে ধরে নিয়েই কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন বিএনপি নেতারা। সারা দেশে ১০টি বিভাগীয় শহরের সমাবেশ শেষে ঢাকার এ সমাবেশের তারিখ ঘোষণা করা হয় অন্তত তিন মাস আগে।
সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করার মতো বক্তব্যও দিয়ে যাচ্ছেন দলটির নেতারা। দলের দুজন সিনিয়র নেতা এরই মধ্যে বলেছেন, ১০ তারিখের সমাবেশের দিন থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়ার নির্দেশে। নেতাদের এমন বক্তব্যের পর থেকেই রাজনীতিতে বাড়তি গুরুত্ব পায় বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ।
বিএনপির এমন রাজনৈতিক ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসে সরকারে থাকা দল। সরকারের প্রবল বাধার মুখে বিএনপি এরই মধ্যে তিনটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করেছে। লোকসমাগমও হয়েছে প্রচুর। গণপরিবহন বন্ধ করে জন¯্রােত কমানোর জন্য ক্ষমতাসীনদের কৌশলকে ব্যর্থ করে দলটির নেতাদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। আর এমন আত্মবিশ্বাস নিয়েই ১০ ডিসেম্বর সরকারের উদ্দেশ্যে আরেকটি বার্তা দিতে চায় বিএনপি। দলটির সিনিয়র নেতাদের মুখে এমন তথ্যই উঠে আসে। নেতারা জানান, এই সরকার আর থাকছে না, আগামী ১০ ডিসেম্ভরের সমাবেশের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানান দিতে মরিয়া বিএনপি।
গত ৮ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনা সভায় আমান উল্লাহ আমান বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়। এর বাইরে কারো কথায় দেশ চলবে না। এর ঠিক চার দিন পর গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে খালেদা জিয়ার সরকার চলবে। যারা খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছেন ১০ ডিসেম্বরের পর তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই বলছেন, এই বক্তব্য বিএনপির নয়। এটা তাদের নিজস্ব বক্তব্য। তারপরও এসব বক্তব্যকে ঘিরেই উত্তপ্ত এখনকার রাজনীতি।
তবে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে চলমান আন্দোলনকে একটি চূড়ান্ত রূপ দিতে চায় বিএনপি। এজন্য ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণজমায়েত করা হবে। এতে কয়েক লাখ লোক জড়ো করে শোডাউনের মধ্য দিয়ে নিজেদের সক্ষমতা জানান দেওয়াই হচ্ছে এখন বিএনপির প্রধান লক্ষ্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই গণজমায়েত কর্মসূচিতে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দেওয়ার পাশাপাশি ঢাকার রাজপথ দখলে নেওয়ার টার্গেটও আছে। তারা বলেন, যদি ঢাকার রাজপথ দখলে নেওয়া সম্ভব হয় তাহলে শিগগিরই সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হবে। বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার পতনের আলটিমেটাম নয় বরং ১০ ডিসেম্বরে বিএনপির প্রথম এবং প্রাথমিক লক্ষ্য গণজমায়েত।
দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউনের মধ্য দিয়ে সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে চায় বিএনপি। সেক্ষেত্রে ১২ অক্টোবর থেকে বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করেছে দলটি। দলটির নেতাকর্মীদের বক্তব্যের মধ্যেও এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। নেতারা বলছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশকে ঘিরে সারা দেশ থেকে ঢাকামুখী অভিযাত্রা হবে। সেই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকার পতনে এক দফা আন্দোলনের সূচনা হতে পারে। এর মধ্যে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎভাবে আন্দোলনে যাওয়ার ধরন-কৌশল নির্ধারণ করবে বিএনপি। আগামী ১০ ডিসেম্বর সরকার পতনে বিশেষ কোনো দিনতারিখ নয়; ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সেই সমাবেশ থেকে বেশকিছু দাবি উত্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর সরকার পরিবর্তনের তারিখ নয়, এটি আমাদের কর্মসূচির তারিখ। এই তারিখ নিয়ে রাজনৈতিক যত বক্তব্য আসছে তা একেবারেই রাজনৈতিক। তবে এই সমাবেশের মাধ্যমে আমরা সরকারকে লাল কার্ড দেখাতে চাই।’ আর জোটগত রাজনীতির ক্ষেত্রে এ সমাবেশ অনেকটা টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে।
এদিকে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় মহাসমাবেশে সর্বোচ্চ শক্তি প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জেলার নেতারা। গত মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগের নেতাদের নিয়ে এক যৌথসভায় এই প্রতিশ্রুতি দেন তারা। ওই দিন কী হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও দলটির এই মহাসমাবেশ সফল করতে ঢাকা বিভাগের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলাকে নানা নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় মহাসমাবেশে সর্বোচ্চ শক্তি প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জেলার নেতারা। গত মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগের নেতাদের নিয়ে এক যৌথসভায় এই প্রতিশ্রুতি দেন তারা। ওই দিন কী হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও দলটির এই মহাসমাবেশ সফল করতে ঢাকা বিভাগের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলাকে নানা নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, যৌথসভা থেকে উপস্থিত নেতাদের আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করতে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা-মহানগরের সভাপতি-আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক-সদস্য সচিবদের তাদের অধীন সংশ্লিষ্ট ইউনিট কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে একই নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে।
সভায় উপস্থিত নেতারা আরো জানান, এই যৌথ সভায় কোন জেলা বা মহানগর কত লোক নিয়ে মহাসমাবেশে যোগ দেবে তার একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নেতারা। এছাড়াও সমাবেশ সফল করতে একাধিক উপকমিটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী বৈঠকে এসব উপকমিটি গঠন করা হতে পারে।
যৌথ সভায় মহাসমাবেশের দলনেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে ও ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টাও তিনি। যৌথসভায় আরো অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, আফরোজা খানম রীতা, খায়রুল কবির খোকন, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সরাফত আলী সপু, আবদুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, বেনজীর আহমেদ টিটু, অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, আকরামুল হাসান, ঢাকা মহানগরের আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, সদ্য কারামুক্ত গাজীপুর মহানগরের আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দিন, সদস্য সচিব শওকত হোসেন সরকার, ঢাকা জেলার ডা. দেওয়ান মো. সালাহ উদ্দীন বাবু ও খন্দকার আবু আশফাক, গাজীপুর জেলার ফজলুল হক মিলন ও রিয়াজুল হান্নান, মুন্সীগঞ্জের আবদুল হাই ও কামরুজ্জামান রতন, নারায়ণগঞ্জ মহানগরের অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুসহ ঢাকা বিভাগের ১১ সাংগঠনিক জেলার ৯০ জন নেতা।