নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নরসিংদীর বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ইউএনও’র ব্যক্তিগত সহকারী) মোস্তাক আহমেদ’র রুমে ঢুকতেই তাকে সালাম দিতে হবে। তারপর তার সাথে কথা বলতে হবে।
বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসা এক সংবাদকর্মীকে এমনটাই বলেছেন তিনি।
বুধবার নরসিংদী থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে এসে নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য নিতে তার কার্যালয়ে যায় সংবাদ কর্মীরা। তারা সরাসরি র্ইউএনও’র রুমে না গিয়ে ব্যক্তিগত সহকারীর রুমে ঢুকে একজন সংবাদকর্মী তার ভিজিটিং কার্ড টেবিলে রেখে সেটা ইউএনওকে দেওয়ার জন্য টেবিলের সামনে বসা লোকটিকে বললে বিপরীত পাশে বসা কম্পিউটারে কাজ করতে থাকা ইউএনও’র ব্যক্তিগত সহকারী মোস্তাক আহমেদ ওই সংবাদ কর্মীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “আপনি কে, কোত্থেকে আসছেন, বাড়ী কোথায়, কেন আসছেন।” জবাবে ওই সংবাদকর্মী বলেন, “আমার পরিচয়টা আমার কার্ডে দেয়া আছে।” তখনই ইউএনও’র ব্যক্তিগত সহকারী পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “রুমে ঢুকে আপনি কি আমাকে সালাম দিছেন।” তখনই ওই সংবাদকর্মী তাকে পাল্টা জবাবে বলেন আপনাকে আমি সালাম দিব কেন? আপনি কে? এসময় ওই সংবাদকর্মীর সাথে থাকা অপর দুই সংবাদকর্মী এসে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে ওই সংবাদ কর্মীকে রুম থেকে বাহিরে ঠেলে বের করে দেয়। কিন্তু এতেও ইউএনওর ব্যাক্তিগত সহকারী ক্ষান্ত হয়নি। তিনি বার বার ওই সংবাদ কর্মীর দিকে তেড়ে আসে। এসময় সাংবাদিকদের সাথে এ ধরনে ব্যবহার করায় অপর দুইজন সংবাদকর্মী প্রতিবাদ করলে ইউএনও’র ব্যক্তিগত সহকারী বলেন, “সাংবাদিক-টাংবাদিক গণিনা সাংবাদিক গণার সময় নাই”। এসময় ইউএনও তার কার্যালয়ে না থাকায় পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ওই সংবাদকর্মীরা কথা না বাড়িয়ে উল্টো ইউএনও’র ব্যক্তিগত সহকারীকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ইউএনও’র ব্যক্তিগত সহকারি মোস্তাক আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে বেলাব উপজেলায় কর্মরত আছেন। তার রূঢ় আচরণ ও খারাপ ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে উপজেলা পরিষদে আসা এলাকার সাধারণ মানুষ। শুধু সাধারণ মানুষই নয় তার এই খারাপ ব্যবহারে অতিষ্ঠ উপজেলার বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবগণ।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন ইউপি সচিব বলেন, আমার চাকুরির বয়স ২০ বছর চলছে। এই ২০ বছরে মোস্তাকের মতো এত খারাপ মানুষ আমি কখনো দেখিনি। সে মানুষকে মানুষই মনে করে না। ইউএনও’র ব্যক্তিগত সহকারি হওয়ার সুবাদে সে নিজেকে ইউএনও’র সমপর্যায়ের মনে করে ধরাকে সরা জ্ঞান করে মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলে। আমাদের একজন সচিবের সাথে সে কয়েকবার খুব খারাপ ব্যবহার করেছে পরে আমরা সবাই একত্রিত হয়ে এর প্রতিবাদ করেছি। এছাড়াও সে ইউএনও’র ব্যক্তিগত সহকারী হওয়ায় অর্থের বিনিময়ে তাকে দিয়ে বিভিন্ন কাজ করাতে হয়। শুধু তাই নয় ইউনিয়নের বিভিন্ন কাজে ইউএনও’র একটা অংশ থাকে, সেটা নিয়েও সে চেয়ারম্যানদের সাথে দর কষাকষি করে। প্রায় মাসখানেক আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হয়ে জন্ম নিবন্ধনের কাজটা যিনি করতেন তিনি বদলি হওয়ায় অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সেই কাজের দায়িত্বটাও তাকে দেয়া হয়। এর ফলে বিভিন্ন ইউনিয়নে জন্ম নিবন্ধন কাজে নিযুক্ত উদোক্তাদের সাথে তার সখ্যতা বেড়েছে।তার রূঢ় আচরণের ব্যাপারে একাধিকবার ইউএনওকে অবহিত করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
এ ব্যাপারে ইউএনও’র ব্যক্তিগত সহকারী মুস্তাক আহমেদের সাথে যোগাযোগ করলে, অনেকটা দাম্ভিকতার সাথে বলেন উনারা তিনজন এসেছিলেন ইউএনও স্যারের সাথে দেখা করতে, স্যার তখন ছিলেন না। আমার রুমে আমি ইউনুস স্যারের ব্যক্তিগত সহকারী এবং উপজেলা চেয়ারম্যান’র ব্যক্তিগত সরকারি বসা ছিল। তাদের একজন আমার রুমে এসে টেবিলের উপর একটি কার্ড ছুরে দিয়ে টেবিলের সামনে বসা উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারীকে কার্ডটি ইউএনও স্যারকে দিয়ে আসতে বলে। কথাটি তিনি দুইবার বলেন। তখন আমি উনার পরিচয় জানতে চাইলে উনি উত্তেজিত স্বরে কার্ডে পরিচয় দেয়া আছে বলে জানান। তার ঔধ্যত্বপূর্ণ আচরণে সালাম দিয়ে ঢুকেছেন কিনা জানতে চাই। তবে সাংবাদিকদের গণার বিষয়টা বলে থাকলে তার জন্য ক্ষমা চান তিনি।
বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা জান্নাত তাহেরার সাথে এব্যাপারে তার মোবাইলে কল দিলে তিনি তা কেটে দেন।