চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব
নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র কলেজ রোডে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অবস্থিত। উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির বিশ্বস্ত চিকিৎসা কেন্দ্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ১৯৮২ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার প্রায় পাঁচলাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ৩১ শয্যার হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণে নতুন ভবন নির্মাণ হয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ৫০ শয্যার এই নতুন ভবনটি উদ্বোধন করেন তৎকালিন নরসিংদী-২ (শিবপুর) আসনের সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন। ৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পেয়ে কার্যক্রম চলতে থাকলেও অবকাঠামোগত ও জনবলের এখনওঘাটতি রয়েছে ব্যাপক।
সরেজমিনে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, শয্যা না পাওয়ায় বিভিন্ন সময়ে রোগিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে। তাছাড়া এক শয্যায় কয়েকজন রোগীকে চিকিৎসা নিতেও দেখা গেছে। পুরনো ভবনের পাশেই ৫০ শয্যার নতুন ভবন। আধুনিকভাবে গড়ে তোলা ভবন থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকের অনুপস্থিতির কারনে রোগিরা অনেক সময় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ২২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলে ১৬ জনের নাম রয়েছে বাকী ৬ টি পদ শূন্য রয়েছে। যে ১৬ জনের তালিকা পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে প্রেষনে রয়েছেন ৪ জন, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ও ১ মার্চ হতে অনুপস্থিত আছেন ২ জন এবং ২০ ফেব্রুয়ারি হতে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন ১ জন। তাছাড়া অধিকাংশ ডাক্তার নিয়মিত হাসপাতালে উপস্থিত না থাকার কারনে চিকিৎসাসেবা ব্যহত হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগির সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা খরচ বহন করার সামর্থ না থাকায় অনেকে বাধ্য হয়ে এ হাসপাতালে সেবা নিতে আসে। আবার অনেকে এখানে এসেও চিকিৎসকের ঘাটতিতে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অন্যত্র।
হাসপাতালের রোডের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রমটি চালু হওয়ায় আমরা একটু ভালো চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। চিকিৎসক ও লোকবল বাড়ালে উপজেলাবাসী আরও উন্নত সেব পেতো।’
হাসপাতালের গত কয়েক দিনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিনই ওয়ার্ডগুলোতে নির্ধারিত শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকছেন। ফলে শয্যার অভাবে অনেক রোগীকে ঠাঁই নিতে হয় মেঝেতে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন অন্তঃবিভাগে তিন শতাধিক এবং বহিঃর্বিভাগে ৭শ থেকে ৮শ রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন।
সামগ্রিক বিষয়ে হাসপাতালের প্রধান সহকারী রাশেদূল কমল বলেন, ‘আমরা ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পুরস্কার পেয়েছি, কিছুদিন আগেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী থেকে পুরস্কার পেয়েছি। সার্বক্ষণিক পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ অব্যাহত রেখে হাসপাতালটির পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ধরে রেখেছি। লোকবল বাড়ানো হলে আমাদের চিকিৎসাসেবা ফলপ্রসূ হবে।’
জেলা পাবলিক হেল্থ নার্স সালেহা খাতুন জানান, শিবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জন নার্সিং সুপারভাইজারসহ মোট ২৫ জন নার্স বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্মরত রয়েছেন।
শিবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আর. এম. ও) ডা. ডলার বলেন, ‘আমরা রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা দিতে চেষ্টা করি, ডাক্তার ও লোকবলের অভাব থাকায় অনেক সময় যথাযথ সেবা প্রদান সম্ভব হয়না। ডেন্টাল সার্জন না থাকায় আমাদের হাসপাতালে অনেক রোগী সেবা নিতে এসেও ফিরে যায়। করোনা পরীক্ষাসহ করোনার ১ম ধাপ থেকেই এ হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচী চালু হয় এবং এ সেবা এখনও অব্যাহত রয়েছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফারহানা আহমেদ বলেন, ‘৫০ শয্যা হাসপাতাল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও লোকবল চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। শয্যা সংকটের কারণে প্রায় সময় বারান্দার মেঝেতেই দিনের পর দিন চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে রোগীদের। তালিকায় নাম থাকা অনেক চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল, জেলা হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসার কজে রয়েছেন।
সিভিল সার্জন ডা. মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘ক্রমান্বয়ে সকল শূন্য পদে চিকিৎসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে। অনেক পদে এখনও নিয়োগই হয়নি।’ জেলা সিভিল সার্জনের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালের কার্ডিওলজি, চক্ষু, ইএনটি, চর্ম ও যৌন, মেডিকেল অফিসারসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে চিকিৎসকের পদ খালি রয়েছে।
সর্বোপরি এলাকার চিকিৎসা উন্নয়নের স্বার্থে হাসপাতালটিতে চিকিৎসক ও অন্যান্য লোকবল বাড়ালে উপজেলার নিন্ম আয়ের রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসাসেবা পাবে বলে চিকিৎসাবিদদের ধারনা।