নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীতে হত্যা মামলার সাক্ষী আসামীদের ফাঁসাতে নিজের শরীরে নিজেই ছুরিকাঘাত ও চামড়ার ভেতরে লোহার টুকরো রেখে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবী করে সাজানো নাটক রহস্য ফাঁস হয়েছে। পুলিশী তদন্তে এমন নাটকীয় রহস্য উম্মোচিত হয়।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় নরসিংদী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. আল আমিন।
এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে সজিব মিয়া (৩০) নামে হত্যা মামলার একজন স্বাক্ষী আসামী পক্ষের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়াকালে সাংবাদিকদের নিকট এ অভিযোগ করেন। মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার জেরে আসামী পক্ষ তার উপর হামলা চালায়। এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল আমিন জানান , ২০১৫ সালে নরসিংদীর শিবপুরে আরিফ পাঠান নামে এক ইউপি সদস্য হত্যা মামলার সাক্ষী সজিব মিয়া গত ১১ অক্টোবর আদালতে মামলার সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য দেওয়ার পরদিন ওই হত্যা মামলার ৪ আসামীর নাম উল্লেখ করে জীবননাশের হুমকিতে আছেন দাবী করে মাধবদী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর গত শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে মাধবদী থানাধীন পাঁচদোনা এলাকার নির্জন একটি পুকুরপাড়ে গিয়ে মামুন নামে তার এক বন্ধুর সহায়তায় পরিকল্পনা অনুযায়ী ছোট চাকু দিয়ে নিজের বুকের ডানপাশে নিজেই ছিদ্র করে চামড়ার ভেতরে লোহার ছোট টুকরা ঢুকিয়ে রাখে সজিব। ঘটনার পর বন্ধু মামুনের সহায়তায় জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে স্বজন, ডাক্তার এবং সাংবাদিকদের সামনে দাবী করেন ইউপি সদস্য হত্যা মামলার সাক্ষ্য দেওয়ায় ওই মামলার আসামীরা হামলা চালিয়ে তাকে গুলি করে। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে নেওয়ার পর কোনো প্রকার অস্ত্রোপাচার ছাড়াই আহত সজিবের বুকের চামড়ার নিচ থেকে লোহার টুকরো বের করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছাড়পত্র দেন চিকিৎসক।
পরবর্তীতে পুলিশ এই ঘটনার তদন্তে নেমে ঘটনাস্থল এলাকার আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজে অন্যান্য কাউকে দেখতে পাননি। এসময় সজিব ও তার বন্ধুকে স্বাভাবিকভাবে হেটে যেতে দেখেন এবং এরকম ঘটনার কোন আলামত না পেয়ে নাটকীয়তার রহস্য পায় পুলিশ।
পরে মামুনের মুখোমুখি হলে হত্যা মামলার সাক্ষী সজিব মিয়া প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে এই নাটক সাজিয়েছেন বলে পুলিশের নিকট স্বীকার করেন। আরো কোন তথ্য পাওয়া যায় কী না তার জন্য মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ পুপার।
অন্যদিকে সাক্ষী শারিরীক ভাবে সজিব অসুস্থ থাকায় তাকে পুলিশি নজরদারিতে রাখা হয়েছে।