নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীর রায়পুরায় অগ্রণী ব্যাংকের ভেতর থেকে উদ্ধারকৃত দুই আনসার সদস্যের মরদেহের প্রাথমিক ময়নাতদন্ত সম্পুর্ন হেেয়ছে। তবে তাদের মৃত্যুর রহস্য এখনো উম্মোচন হয়নি। বিষয়টি ধোঁয়াশা থেকে গেছে।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্তÍ কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম জানায়, বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে এই ঘটনায় রায়পুরা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। বিকেলে মরদেহ দুটো ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে বুধবার ব্যাংকের নিরাপত্তায় থাকা ওই দুইজন আনসার সদস্যদের মরদেহ তালা ভেঙ্গে ভেতর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
উদ্ধ্রাকৃত দুই আনসার সদস্য হলেন রঞ্জু মিয়া (৩৯) ও তৌহিদ ফকির (২৪)। তারা দুজনই ব্যাংকের রাত্রিকালীন নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। নিহত রঞ্জু মিয়া টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার উকিলপাড়া এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে এবং তৌহিদ ফকির ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পূর্ব সদরদী গ্রামের সিদ্দিক ফকিরের ছেলে।
সিভিল সার্জন ডা. মো নুরুল ইসলাম বলেন, দুই আনসার সদস্যের ময়নাতদন্ত নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে সম্পুর্ন হয়েছে। তাদের শরীরে কোনো প্রকার আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্নয়ে জন্য কিডনি ও লিভার ভিসেরা রির্পোটের জন্য মহাখালি প্রেরণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ব্যাংক কর্মকর্তা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকের ভেতরে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়য়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্যাংকটির কর্মকর্তারা কাজ শেষে কর্মস্থল ত্যাগ করার পর ওই দুই আনসার সদস্য মূল দরজা ও কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ করে বাইরে যান। সন্ধ্যা সাতটার পর স্থানীয় বাজার থেকে আলু, মরিচসহ কাঁচাবাজার ভর্তি একটি ব্যাগ নিয়ে পুনরায় ব্যাংকের ভিতর প্রবেশ করেন। এ সময় তারা মেইনগেটের কলাপসিবল ও দরজা তালাবদ্ধ করে বাজারের ব্যাগ হাতে দুজনই রান্নাঘরে ঢোকেন। অল্প সময়ের মধ্যেই সেখান থেকে বেরিয়ে কার্যালয়ের ভেতরেই রাত আনুমানিক আটটা পর্যন্ত দুজনকেই অস্থিরভাবে পায়চারি করতে এবং সিগারেট টানতে দেখা যায়। পরে তারা তাদের স্টোর রুমে ঢুকে পড়েন। সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ অনুযায়ী রাত ৮টার পর তারা আর ওই স্টোররুম থেকে বের হননি। ধারণা করা হচ্ছে, ওই কক্ষে ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তাদের বিশ্রামের জন্য বরাদ্দ থাকায় ওই কক্ষে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা দেওয়া হয়নি। তাই পরে কী হয়েছে, তা জানা যায়নি।
উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সেলিম মিয়া জানান, তাদের দুজনের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন দেখতে পায়নি। তবে মুখে ফেনা ছিল। আর খাবারে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তারা শেষ কোথায় কী খাবার খেয়েছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নরসিংদী অগ্রনী ব্যাংকের জোনাল প্রধান শাহজাহান খান জানান, স্থানীয় এক নারী প্রতিদিন সকালে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরুর আগে এসে আনসার সদস্যদের ডেকে তুলতেন। এরপর কার্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রান্না করেন। প্রতিদিন দুপুরে তার রান্না করা খাবার খায় ওই ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। প্রতিদিনের মতো বুধবার সকাল নয়টার দিকে ওই নারী এসে ডাকাডাকি করছিলেন। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না। ব্যাংকটির কয়েক কর্মকর্তাও এসে ভেতর থেকে দরজা আটকানো দেখতে পান। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পরও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রায়পুরা থানার পুলিশকে খবর দেয়। বেলা সাড়ে ৯টার দিকে ব্যাংকের কার্যালয়ে এসে কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন পুলিশ সদস্যরা। পরে স্টোর রুম থেকে ওই দুই আনসার সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তখনো তাদের একজনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের ফ্লাশলাইট জ্বলে ছিল। এতে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মৃত্যুর সময় হয়তো বিদ্যুৎ ছিল না। পরে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর মরদেহ দুটি নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
আনসার সদস্যের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম জানান, মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে। এই ঘটনায় রায়পুরা থানায় অপমৃত্যুর মামলাও হয়েছে। মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। কিভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে বিষয়টা এখনও পরিষ্কার না। তবে ময়নাতদন্তে রির্পোট আসলে তা বলা যাবে। এই নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে এবং খুব শীঘ্রই আমরা তাদের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনের করতে পারব।