নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাতের আঁধারে ব্যাটারিচালিত দুই বিভাটেকের মুখোমুখি সংঘর্ষকে পরিকল্পিত হামলা বলে চালিয়ে দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিব উল্লাহ। সামান্য অটোরিকশা দুর্ঘটনা নিয়ে একজন নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানের এমন জঘন্য মিথ্যাচারে হতবাক হয়ে পড়েছেন পুরো এলাকাবাসী। এ নিয়ে পুরো এলাকায় নিন্দার ঝড় বইছে।
শুক্রবার (৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রায়পুরা উপজেলার বাখরনগর-সাহেবনগর – তুলাতলী সড়কের ঝালুরচক নামক স্থানে বিভাটেক দুর্ঘটনায় আহত হন উত্তর বাখরনগর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিব উল্লাহ। আর এঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চেয়ারম্যান তার কর্মীদের দিয়ে সন্ত্রাসী হামলা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
এলাকাবাসীর অনুরোধে সেদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনার সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে সরেজমিনে রবিবার (৯ জুলাই) দুপুরে উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের আল্লার মোড় বাজারে গেলে এলাকাবাসী জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিব উল্লাহ ও পন্ডিত মেম্বার বিভাটেকযোগে রায়পুরা যাওয়ার সময় ঝালুরটেক নামক স্থানে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য আরেকটি বিভাটেকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়ে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য পড়ে গিয়ে সামান্য আঘাত পায়। এসময় বিপরীত দিক থেকে আসা বিভাটেক চালক মোঃ হৃদয় (১৬) ভয় পেয়ে দ্রুত অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।
এঘটনাকে মুখ্যম হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে অল্প সময়ের মধ্যেই চেয়ারম্যান এটিকে পরিকল্পিত হামলা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল করা সহ জেলা পুলিশ গ্রুপে আপলোড করে দিলে পুরো এলাকা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে একচ্ছত্র আধিপত্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদকে তিনি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। এলাকাবাসী তার এসকল অনিয়মের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি তার প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ১০ জন ইউপি সদস্য তাকে অপসারণের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন বলে ও জানান তারা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পন্ডিত মেম্বার বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে চেয়ারম্যান হাবিব উল্লাহ আমাকে সাথে নিয়ে রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু এমপির মিটিং এ যাওয়ার জন্য বিভাটেকযোগে রওয়ানা হয়। আমরা ঝালুরটেক নামক স্থানে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বিভাটেকের সাথে সংঘর্ষ হলে চেয়ারম্যান ও আমি সহ উভয় গাড়ির যাত্রীরা পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাই। এসময় বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির চালক ও যাত্রীরা উঠে আমাদেরকে কোনরকম সাহায্য না করে দ্রুত পালিয়ে যায়। এতে করে চেয়ারম্যান এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হামলা বলে ফেইসবুকে ভাইরাল করে দিলে এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। উভয় গাড়ির লোকজনের ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির চালক ও যাত্রীরা যদি না পালিয়ে আমাদেরকে সহযোগিতা করতো তাহলে এমনটি হতো না।
বিভাটেক চালকের পিতা-মোঃ মোস্তফা বলেন, ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যানের ভয়ে আমার ছেলে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। দেড়দিন পরে তাকে খুঁজে বের করে তার খালার বাড়িতে রেখেছিলাম সেখান থেকে ও সে পালিয়ে গেছে। আমি আমার ছেলেকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। চেয়ারম্যানের ভয়ে বর্তমানে আমরা চরম আতঙ্কে আছি।
বিভাটেক চালকের বড় ভাই মোঃ সোহাগ বলেন, রাতের আঁধারে আমার ভাইয়ের চোখে মরিচা পোকা ঢুকে অপর দিকে সামনের গাড়ির হেডলাইটের আলো চোখে পড়ায় সে সামনে কিছু দেখতে না পাওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার পর সে সেখানে চেয়ারম্যানকে দেখতে পেয়ে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যায়। অপরদিকে চেয়ারম্যান আমার ভাইকে চিনেও তার উপর পরিকল্পিত হামলা বলে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে দেয়।
এব্যাপারে জানতে চেয়ারম্যানের বাড়ি ও ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।