মনিরুজ্জামান, নরসিংদীঃ
দৃষ্টিনন্দন প্যাকেটে মিষ্টি কিনে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারিত হয়ে আসছে নরসিংদীর মাধবদী পৌর এলাকার সাধারণ ক্রেতারা।আর এতে করে লাভবান হচ্ছেন ওজন কারসাজির সাথে জড়িত কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
অধিক মুনাফা লাভের আশায় অতিরিক্ত ওজনের প্যাকেটে অভিনব কায়দায় দীর্ঘদিন ধরে তারা মিষ্টি বিক্রি করে গ্রাহক ঠকিয়ে আসছে।
গ্রাহকদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার ( ১০ জুন) বিকেলে মাধবদী বাজারের বিভিন্ন মিষ্টির দোকান ঘুরে গ্রাহকদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ দোকানে ৩ ধরনের মিষ্টির প্যাকেট রয়েছে। দোকানের সামনে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের নাম সম্বলিত কিছু প্যাকেট সাজিয়ে রাখা হয়েছে যার ওজন ৭০ থেকে ১০০ গ্রামের মধ্যে। ভেতরে কিছু প্যাকেট তাকের মধ্যে সাজানো রয়েছে যেগুলোর ওজন ১৪০ থেকে ১৯০ গ্রামের মধ্যে। আর মিষ্টি বিক্রির জন্য যেগুলো প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে সেগুলোর ওজন ২২০ থেকে ২৭০ গ্রাম।
প্যাকেটের বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যাবসায়ীরা বলেন, মাধবদীতে মিষ্টির নির্ধারিত কোন মূল্য নেই।একেক দোকানদার একেক রকম দামে বিক্রি করে। এতে করে দোকানদাররা গ্রাহকদের কাছে মিষ্টি বিক্রির সময় সমস্যায় পড়তে হয়।
অনেক সময় গ্রাহকরা মিষ্টি যখন কম দামে নিতে চায় তখন বেশি ওজনের প্যাকেটে তাদের মিষ্টি দেওয়া হয় এতে করে দাম কম হলেও প্যাকেটের ওজনের কারণে কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া যায়।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাঝারি ওজনের প্যাকেটে মিষ্টি বিক্রি করা হয়।আর নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ৬০ গ্রাম বা ১০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেটগুলো শুধুমাত্র আইনী জটিলতা থেকে বাঁচার জন্য সাজিয়ে রাখা হয় বলে ও জানান তারা।
মাধবদী বাজারের দীপা সুইটমিট, পিপাসা সুইটমিট-১, পিপাসা সুইটমিট-২, জলখাবার সুইটমিট, মুসলিম সুইটমিটসহ বেশ কিছু দোকানদার দীর্ঘদিন ধরে ক্রেতাদের সাথে এমন অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে আসছে।
এবিষয়ে দীপা সুইটমিটের মালিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাস্টমারের কাছে ৮০ গ্রাম কার্টুনে মিষ্টি নিলে ২২০ টাকা কেজি ও ২২০ গ্রাম ওজনের কার্টুনে মিষ্টি নিলে ১৬০ টাকা কেজি বলেই বিক্রি করি। দোকানদারের কাছে ৮০ গ্রাম ওজনের কার্টুন দেখতে চাইলে তিনি তার দোকানে নেই বলে জানান। তারপর দোকানদার আর কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।
জলখাবার সুইটমিটের মালিক বলেন,আমরা সমিতির নির্ধারিত ওজনের প্যাকেট দিয়েই মিষ্টি বিক্রি করে আসছি। অতিরিক্ত ওজনের প্যাকেট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অতিরিক্ত ওজনের প্যাকেট গুলো দই বিক্রর ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয়। অতিরিক্ত ওজনের প্যাকেট দিয়ে আমরা মিষ্টি বিক্রি করি না।
এবিষয়ে পিপাসা সুইটমিটের মালিক বলেন, সুইটমিট সমিতির পক্ষ থেকে ৫০ গ্রাম ওজনের কার্টুন দিয়ে মিষ্টি বিক্রি করতে বলা হলেও কিছিু কিছু দোকানদার বেশি ওজনের কার্টুন দিয়ে মিষ্টি বিক্রি করায় আমিও করি। আজ থেকে আমি আর বেশি ওজনের কার্টুন দিয়ে মিষ্টি বিক্রি করব না।
তবে মাধবদী বাজার বণিক সমিতির পক্ষ থেকে সকল দোকানদারদের জন্য মিষ্টির একটি নির্দিষ্ট মূল্য ঠিক করে দিলে ক্রেতাদের এ ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে না বলে ও জানান তিনি।
পিপাসা সুইটমিট মাধবদী বাজার বাসস্ট্যান্ড শাখার মালিকের দোকানে গিয়ে অতিরিক্ত ওজনের প্যাকেটে মিষ্টি বিক্রি করতে দেখে এব্যাপারে জানতে চাইলে মালিক দোকানে নেই বলে জানান।
পরে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি অর্থের বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোঃ মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিকের কাছে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মাধবদী বাজার সুইটমিট সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, ডিসি মহোদয়ের নির্দেশে বাজারের মিষ্টি বিক্রেতাদের সাথে আলোচনা করে প্যাকেটের ওজন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সে সিদ্ধান্ত অমান্য করে নিজেদের ইচ্ছামত প্যাকেটে মিষ্টি বিক্রি করে গ্রাহক ঠকিয়ে আসছে বলে ও জানান তিনি।
মাধবদী বাজার সুইটমিট সমিতির সাধারন সম্পাদক চন্দন কুমার সাহা বলেন দোকানদারদের সঠিক ওজনের প্যাকেটে মিষ্টি বিক্রির জন্য একাধিকবার তাগাদা দিলেও তারা তা মানে নি। এব্যাপারে ৬০থেকে ৮০ গ্রামের ওজনের প্যাকেটে মিষ্টি বিক্রির সিদ্ধান্ত ও দেওয়া হয়েছে কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করে বেশি ওজনের প্যাকেট দিয়েই তারা মিষ্টি বিক্রি করছে।
মাধবদী বাজার মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেনের কাছে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের তথ্য জানা নেই। তবে এরকম ঘটনা ঘটে থাকলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া এব্যাপারে সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান তিনি।