মনিরুজ্জামান,নরসিংদীঃ
নরসিংদীর মাধবদীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সেলিম মিয়া (২৯) নামে অসহায় পরিবারের এক সদস্যকে বেদম পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উল্টো তার নামে থানায় লুটের অভিযোগ দায়ের করে তাদের জমি জবরদখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রভাবশালী ভূমি খেকো দ্বীন মোহাম্মদ।
আহত সেলিম মিয়া নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন পাইকারচর ইউনিয়নের খাদিমারচর এলাকার মোঃ নূরুল ইসলামের ছেলে।
এ ঘটনায় আহতের বড় ভাই আব্দুল হালিম বাদী হয়ে মাধবদী সি,আর আমলী আদালত, নরসিংদীতে ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ৫২১/২০২২
আসামিরা হলো,খাদিমারচর এলাকার দ্বীন মোহাম্মদের ছেলে ফয়সাল (২৩), জোনায়েদ (২১),স্ত্রী শিরিনা(৩৫),মৃত মোন্তাজ উদ্দিনের ছেলে দ্বীন মোহাম্মদ (৪৪),সাহাজ উদ্দিনের ছেলে আতাবুর(২১)ও মজিবর(২৩)।
মামলার সূত্রে জানা যায়, সোমবার (১৩ জুন)সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে উল্লেখিত আসামীগণ দা,ছোড়া,লাঠি,হকিস্টিক,প্লাস, মাইরের কাঠ ও দেশীয় অস্ত্রসহ বাদীর বাড়িতে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে।এসময় বাদীর ছোটভাই সেলিম এগিয়ে আসলে তাকে বেদম পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে তাদের ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এসময় তাদের কুপে সেলিমের মাথার সামনে ও পিছনে গুরুতর জখম হয়। আহত সেলিমকে প্রথমে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে সিটিস্ক্যান করাসহ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নরসিংদী জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসা শেষে গতকাল বাড়িতে ফিরেছেন।
এব্যাপারে জানতে সরেজমিনে গতকাল সেলিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মাথায় ও হাতে গুরুতর জখম নিয়ে অসহনীয় যন্ত্রণায় বিছানায় কাতরাচ্ছেন।
সেলিম বলেন,আমরা অতি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।
দীর্ঘদিন ধরে এলাকার প্রভাবশালী আমার চাচাত ভাই দ্বীন মোহাম্মদ আমাদের জমি দখল করে রেখেছে। এনিয়ে এলাকায় বহুবার দেন দরবার হলেও সে আমাদের জমি বুঝিয়ে দেয়নি। সে এলাকার কারো রায় মানে না।আমি এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে মেরে ফেলার জন্য কয়েক দফা হামলা চালিয়েছে।এ নিয়ে ২৮/১২/২০২১ইং তারিখে নরসিংদী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মামলা নং ২০/২০২২
ঘটনার দিন সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে তারা হঠাৎ করে দাও,ছোরা ও লাঠিসোটা সহ দেশীয় অস্ত্রসহ আমাদের বাড়িতে এসে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে।আমি এতে প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে কুপিয়ে মেরে ফেলতে চায়। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে যাই। বর্তমানে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমি আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া সহ সন্ত্রাসী দ্বীন মোহাম্মদ,তার ছেলে ও ঘটনায় জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই ।
সেলিমের বড় বোন নুরুন্নাহার বলেন,দ্বীন মোহাম্মদ আমাদের জমি দখল করে কারখানা নির্মাণ করে রেখেছে। এ নিয়ে আমাদের জমি বুঝিয়ে দিতে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। সে বুঝিয়ে দিবে বলে তালবাহানা করছে। সে এলাকার কারো রায় মানে না। জমি নিয়ে কথা বলার কারণে ৬ মাস পূর্বে দ্বীন মোহাম্মদ,তার ছেলে,শালা সুমুন্দি সবাই মিলে আমার ভাই সেলিমকে চোর অপবাদ দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়েছে। এ নিয়ে আমরা তার নামে মামলা ও করেছিলাম। পরে ভবিষ্যতে আর এমন করবেনা বলে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে বিচারকদের মাধ্যমে মীমাংসা করে। এবার ও সে আমার ভাইকে মেরে ফেলার জন্য মাথায় কুপিয়ে উল্টো আমার ভাইয়ের নামে থানায় লুট-পাটের অভিযোগ দিয়েছে। আমি এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে হামলাকারীদের উপযুক্ত বিচার চাই।
আমরা আর কতদিন মার খাব বলতে পারেন প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
মোস্তফা নামে এক এলাকাবাসী জানান, ইতিপূর্বে ও বিনা অপরাধে সেলিমকে চোর অপবাদ দিয়ে তারা প্রচুর মারধর করেছে।পরে দুইজন ইউপি সদস্য ও এলাকার নেতৃস্থানীয়দের উপস্থিততে দ্বীন মোহাম্মদকে আর্থিক জরিমানা করা হয়।
মূলত জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই এ ঘটনা ঘটেছে।এবারের ঘটনা ও তারই নামান্তর ছাড়া কিছুই নয়। তবে দ্বীন মোহাম্মদ সেলিমের নামে যে লুটের মামলা দায়ের করেছে তার কোন ভিত্তি নেই বলে ও জানান তিনি।
লুটপাট,সুতা,চাউল ও টাকা পয়সা চুরির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে দ্বীন মোহাম্মদের বাড়িতে গেল দ্বীন মোহাম্মদ,তার ছেলে ও পরিবারের পক্ষ থেকে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এসময় নানা বিষয়ে তাদের প্রশ্ন করলে তারা উপায়ন্তর না পেয়ে সাংবাদিকদের সাথে তারা কিছু বলতে বাধ্য নন বলে জানান।
এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি আলী হোসেন বলেন,এঘটনা নিয়ে এলাকায় অনেকবার বসা হয়েছে। দ্বীন মোহাম্মদ এলাকার কাউকেই তোয়াক্কা করে না।
সে তার গায়ের জোরে দীর্ঘদিন ধরে অসহায় এ পরিবারের জমি দখল করে রেখেছে।
জমি মেপে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বললে বিভিন্ন অজুহাতে তালবাহানা করে। তাছাড়া জমির কথা বলতে গেলেই বিভিন্ন মিথ্যা নাটক সাজিয়ে তাদের উপর হামলা করা হয়। অর্থের বিনিময়ে এলাকার উশৃঙ্খল একটি মহল তাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় বিধায় সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে ও জানান তিনি।
পাইকারচর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাশেম বলেন,আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ।বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই।তবে খাদিমারচর এলাকার মানুষ একটু উগ্র স্বভাবের সেখানে প্রায় সময় ঝগড়ার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে ও জানান তিনি।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রাকিবুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি৷