নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
মাধবদীর টাটাপাড়া এলাকায় সাগর(৩০) নামে এক যুবককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন নিহতের স্বজনরা।
তবে পুলিশ জানিয়েছেন হত্যা নয় বরং সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে সাগর নামে ওই যুবক।
মঙ্গলবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় সরেজমিনে সদর উপজেলার মাধবদীর ভগীরথপুর এলাকায় নিহতের বাড়ীতে গিয়ে কথা হয় নিহেতের স্ত্রীর হামিদা বেগমের সাথে। তিনি দৈনিক অধিকারকে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামীকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার স্বামী সাগর মাধবদী পৌর শহরের টাটাপাড়া এলাকার কামাল এর ছেলে ওয়াসিম (২৮) নামে এক যুবকের মাছের খামারে ৫ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী করতো। তারা কাজের নামে তাকে দিয়ে অন্য ব্যবসা চালাতো।
এসব জানার পর সাগর কাজ ছেড়ে দেয়। এরপর সোমবার (১১ জুলাই) ভোরে আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয় তারা। পরে তারা তাকে মারধর করে চোখে ও মাথায় একাধিক রক্তাক্ত জখম অবস্থায় টাটাপাড়া মহল্লায় চলাচলের রাস্তায় ফেলে রাখে। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে শুনি তাকে রনি নামে একজন নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। পরে ফোনে রনির সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি সাগরকে ঢাকা নেয়ার হচ্ছে। এরপর তার সাথে ঢাকা চলে যাই। বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে গতকাল দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর বিমানবন্দর রোডের জাপান চিচিং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাগর মারা যায়। এদিকে সাগরকে হাসপাতালে রেখেই রনি পালিয়ে আসে বলে জানান তিনি।
নিহতের বড় বোন ফাতেমা বেগম দৈনিক অধিকারকে জানান, “আমার ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়নি, তাকে মেরে ফেলা হয়েছে”। আমি নিজে তাকে ঢাকায় হাসপাতালে নিয়ে গেছি। তাকে মাথায় ও চোখে একাধিক আঘাত করা হয়েছে, এটা একসিডেন্টের রোগি না। ঢাকার ডাক্তারও এসব কথা বলেছে”। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।
নিহতের মা’ মনোয়ারা ও বাবা মাসুদুর রহমান আব্দুল হাই একই দাবী করে দৈনিক অধিকারকে বলেন, ঈদের দিন সারারাত তারা সাগরকে নিয়ে ঘুরেঘুরি করেছে। পরে সে ভোরে বাড়িতে আসলে আবার ৪টা ২০ মিনিটে সাগরকে ডেকে নেয় তারা। পরে সকালে শুনি তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আমার ছেলে সাগরকে পরিকল্পিত ভাবে মারা হয়েছে। পুলিশ আমার ছেলের লাশ মর্গে নিয়ে গেছে। আমি অসুস্থ থাকায় আইনের আশ্রয় নিতে পারিনি। তার মা দৌরা দোড়ি করতাছে। আমি সাগরের দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে আছি। ওরা কারা নাম জানতে চাইলে তিনি জানান, টাটা পাড়ার ওয়াসিমের এখানে কাজ করতো সাগর। তারাই আমার ছেলেকে মারছে। “স্যার আপনারা একটা কিছু করেন। তারা আমার ছেলেটারে কি অপরাধে মারলো ”। আমি এর বিচার চাই।
নিহতের শ্বাশুরী শাহিদা বেগম দৈনিক অধিকারকে জানান, প্রায় দশবছর পূর্বে মাধবদী পৌর শহরের মাসুদুর রহমান আব্দুল হাইয়ের ছেলে সাগরের কাছে আমার মেয়েকে বিবাহ দেই। পরে তাদের ভিটে মাটি বিক্রি করে মেহেরপাড়া ইউনিয়নের ভগীরথপুর এলাকায় অন্যের বাড়িতে জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে তারা। আমার মেয়ের সংসারে সাদিয়া (৭) ও ছোঁয়া (৬) নামে দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। এখন মেয়ের জীবনটা কি হবে?। তিনি সাগর হত্যার বিচার চান।
এদিকে রনি ও ওয়াসিমের বক্তব্য নিতে তাদের টাটা পাড়ার বাড়িতে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মুহাম্মদ রকিবুজ্জামান বলেন, ভগীরথপুরে সাগর মার্ডারের সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাই নাই। তবে আমরা খবর নিয়েছি গত পরশু সাগর রোড একসিডেন্ট করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো।
তবে পরিবারের দাবি পরিকল্পিতভাবে হত্যা এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, রোড একসিডেন্ট কিভাবে মার্ডার হলো এটা আমার জানা নেই, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আসলে জানা যাবে। তবে এ বিষয়ে থানায় কারো কোন অভিযোগ নাই। আমরা মরার পরে এ খবর পাইছি। আপনি একটু হাসপাতালে খবর নেন।
নরসিংদী সদর হাসপাতালে জরুরী বিভাগের ইনচার্জ আসাদ মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি দৈনিক অধিকারকে জানান, সোমবার ভোরের দিকে রনি নামে এক যুবক সাগরকে আহতবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে তার অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা স্থানান্তর করেন। তবে নথীতে সড়ক দুর্ঘটনা এন্ট্রি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আজ মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত নিহত সাগরের মরদেহ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।