সদর দলিল লেখক সমিতির অনিয়ম পর্ব-১
নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদী সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির কার্যকরি পরিষদের মেয়দকাল শেষ হয় গত ২০ ফেব্রয়ারী। মেয়াধোত্তীর্ণ কার্যকরি পরিষদের কাউকে কিছু না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে সাধারণ সভা না করে হঠাৎ ১১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি উপহার দিলেন স্বঘোষিত জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নূরে আলম ভূঁইয়া। আর তার সাথী হিসেবে নিলেন শিবপুর দলিল লেখক সমিতির মুকুল পলাশ দলিল লেখক সমিতির সালাউদ্দিনকে। যারা কিনা তাদের নিজেদের অফিসে বিশৃংখলাকারী ও চাঁদাবাজ হিসেবে খ্যাত।
জানা যায়, নূরে আলম ভূঁইয়া নিজের হাতকে শক্তিশালী করতে এবং সাধারণ দলিল লেখকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী করতে প্রধান উপদেষ্ঠা করেছেন মানবিক মেয়র হিসেবে খেতাব প্রাপ্ত নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলকে। জামায়াতে ইসলামীর বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে নেতৃত্বদানকারী বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে কয়েক দফা কারাভোগকারী জহিরুল ইসলামকে আহবায়ক কমিটির আহবায়ক, নবীন সদস্য মামুন ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করে ৯০ দিনের জন্য কমিটির অনুমোদন করেন স্বঘোষিত জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নূর আলম ভূঁইয়া।
এই কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, যুগ্ম আহবায়ক আবদুল্লাহ ইবনে রহিছ মিঠু, বাকী ৮ জনকে কার্যনির্বাহী সদস্য হলেন- আতাউর রহমান, আ: আজিজ, কবির হোসেন, আলী হোসেন , দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, মাহবুব হোসেন মামুন ও মোকলেছুল হক মানিক। এই কমিটি দলিল লেখক সমিতির সদস্যদের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য এ কমিটির অনুমোদন দেন।
সমিতির প্রধান উপদেষ্ঠা করেছেন মানবিক মেয়র হিসেবে খেতাব প্রাপ্ত নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল পবিত্র ওমরা পালনে বর্তমানে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে দলিল রেজিষ্ট্রির ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করেছেন নূর আলম ভূঁইয়া। দলিল সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহায়কের কাছে জমা দানের পূর্বে সমিতিতে ২ হাজার টাকা জমা দিয়ে সিরিয়াল নিতে হয়। সমিতি থেকে সিরিয়াল নেওয়া না থাকলে অফিস সহায়ক বাছেদ তা প্রত্যাখান করে বলেন, “সিরিয়াল নিয়ে আস নতুবা দলিল রেজিষ্ট্রি হবেনা।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকএকাধিক দলিল লেখক বলেন, ‘ একটা দলিল রেজিষ্ট্রি করলে আমরা পারিশ্রমিক হিসেবে পাই ২/৩ হাজার টাকা। যার থেকে বর্তমানে নূর আলম ভূঁইয়া সাহেবকে সমিতি নামে ২ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের চলা দায় হয়ে পড়েছে।
দলিল লেখকরা অভিশাপ আর আর্তনাৎ করে বলেন, “কেন কি কারণে নূরে আলম ভূঁেইয়ার নিদের্শে আমাদের কাছ থেকে জোড়পূর্বক দলিল প্রতি ২ হাজার টাকা করে আদায় করছে। য দিতে গিয়ে আমার ঘরে খাবার নিতে পারছিনা।”
সমিতির কয়েকজন প্রবীণ দলিল লেখক বলেন, “উনি দামী গাড়ী দামী বাড়ী, দামী পোশাক এবং মান্তান পোষেণ। উনার কথার উপর কেউ কোন কথা বলার সাহস রাখে না। কিছু বলতে গেলে তিনি সনদ বাতিলের ভয় দেখান। দূর্নীতির দায়ে সদর সাব-রেজিষ্ট্রার নিহার রঞ্জণ বিশ্বাস গত ৩ মাস পূর্বে বরখাস্ত হন। আমাদের ভূঁইয়া যে কখন বরখাস্ত হবেন তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। আমরা উপর ওয়ালার কাছে বিচার দাবী করছি।যেন আমাদেরকে এই জুলুমবাজের হাত থেকে রক্ষা করেন।”
এসময় দলিল করতে এক ব্যক্তি অনেকটা উৎসুক স্বরে তার দলিল লেখককে জিজ্ঞেস করেন আচ্ছা আপনাদের অফিসে প্রতিদিন প্রায় কতগুলো দলিল রেজিষ্ট্রি হয়।
জবাবে ওই দলিল লেখক জানান , কম করে হলেও প্রতিদিন প্রায় ১০০টি দলিল রেজিষ্ট্রি হয়।
এই কথাশুনে দলিল করতে আসা ওই ব্যক্তি বলে উঠেন , মানুষ কোটি টাকা বিনিযোগ করে দৈনিক ২০ হাজার টাকা ব্যবসা (আয়) করতে পারে না। আর আপনাদের নূরে আলম ভূঁইয়াতো দেখছি বিনা পূঁজিতে প্রতিদিন দলিল প্রতি যদি ২ হাজার টাকা নেয় তাহলে ২ লাখ টাকার উপরে আয় করে নিয়ে যাচ্ছে। তিনিতো শিল্পপতিকে হারমানাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন দলিল লেখক বলেন, “১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে লুঙ্গি গামছা পড়ে এদেশের আপামর জনগণ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বহু আত্মদান আর মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এদেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন আজ তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সেই লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে দেশ। স্বাধীনতার এতবছর পর জাতীয় পার্টি থেকে আসা নেতা নূরে আলম ভূঁইয়া দলীয় নেতাদের ম্যানেজ করে প্রতিদিন কামিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কোথায় স্বাধীনতা? কোথায় মুক্তি? আজ তার হাতে আমাদের মত সাধারণ দলিল লেখকদের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে। তাইতো আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করে বলতে চাই । নরসিংদী সদর দলিল লেখক সমিতি সদস্যদের প্রতি হওয়া এ অনিয়ম অত্যাচার ও জুলুমের বিষয়টি আমলে নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নে সোনার বাংলা স্বাধীনতার স্বাদগ্রহণ একজন সফল নাগরিক হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
এব্যাপারে কমিটির সদস্য সচিব মামুন ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা করলে দুই হাজার টাকার বিষয় শুনতে তিনি বলেন এ ব্যাপারে আমি ফোন কোন কথা বলবো না প্রয়োজন হলে আপনি অফিসে আসেন বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এব্যাপারে কমিটি আহবায়ক জহিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “সামনে ঈদ, তাছাড়া করোনার জন্য দীর্ঘদিন অফিস বন্ধ ছিল। ফান্ডে টাকা পয়সা নাই। রোজার মাস বুঝেনইতো সদস্যদের বোনাসের বিষয় আছে। সমিতির বিভিন্ন খরচ ও ঈদ বোনাসের প্রয়োজনে এ চাঁদা সংগ্রহ করছি।”
তিনি আরও বলেন, আগে সমিতি টাকা জমা নিত শফিক। আর এখন নেয় আনোয়ার। শফিক আমাদের টাকা-পয়সা বুঝিয়ে দিয়ে যায়নি।
শফিক যদি সমিতির টাকা নয়-ছয় করে থাকে তবে তাকে ধরে এনে তার কাছ থেকে সমিতির টাকার হিসেব নেওয়া হচ্ছে না কেন? উত্তরে বলেন, নিব নিব।
এবিষয়ে কথা বলতে কেন্দ্রিয় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নরসিংদীর দলিল লেখকদের অভিভাবক নূরে আলম ভূইয়ার ০১৭১১৫২৪৮৫৭ এই নাম্বারে একাধিবার ফোন করতেও তিনি তা রিসিভ করেন নি। ফলে তিার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।