নিজস্ব প্রতিবেদক
একই গ্রামে এক ফকিরের দুই মাজার। এক মাজারে দাফন করা হয়েছে ফকির চাঁন মিয়া শাহ ওরফে কলসী ওয়ালা নামে এক ফকিরকে। অন্য মাজারে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে কলাগাছ। দীর্ঘ ৩৬ বছর আগে মারা যাওয়া আধ্যাত্মিক পুরুষ চাঁন মিয়া শাহের এই দুই মাজারেই চলে একই তারিখে বাৎসরিক ওরশ। চলে ভক্তদের মানত মাজার জিয়ারত। চলতি মাসের ১০ ও ১১ তারিখে এই দুই মাজারেই অনুষ্ঠিত হবে বাৎসরিক ওরশ।
দুই মাজারের মধ্যে কলাগাছ দাফন করা মাজারটিকে এলাকাবাসি বলছেন ভুয়া মাজার। কলাগাছকে ঘিরে গড়ে তোলা ভূয়া এই মাজারে ওরশের নামে ভন্ডামী ও অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে এলাকাবাসির একাংশ। চলতি মাসের ৫ জানুয়ারী কলাগাছের এই মাজারে ওরশের নামে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রায় একশত মানুষের গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।
লিখিত আবেদন ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে ১০ জানুয়ারী বেলাব উপজেলার চরউজিলাব ইউনিয়নের বারৈচা গ্রামের চাঁন মিয়া শাহ মারা যান। স্থানীয়ভাবে কলসীওয়ালা নামে পরিচিত এই ফকির মারা যাবার পর একই গ্রামের দুই স্ত্রীর সাংসারের সন্তানদের মধ্যে লাশ দাফন করা নিয়ে দেখা দেয় মতবিরোধ। পরে সামাজিকভাবে নেওয়া সিদ্ধান্তে ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বারৈচা গ্রামের মধ্যপাঁড়ায় প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের পুরাতন বসত বাড়ির আঙ্গিনায় তার লাশ দাফন করা হয়।
এর আগে বারৈচা দক্ষিনপাঁড়া গ্রামের ৯ নং ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানদের বসতভিটার আঙ্গিনায় তৎকালীন সময়ে কয়েকটি কলাগাছের ওপর লাশের গোসল শেষ করা হয। সে অনুযায়ী ফকির চাঁন মিয়া শাহের গোসলও করানো হয় কলাগাছের ওপর। লাশ দাফনের পর গোসলের সময় ব্যবহৃত কলাগাছ রাখার স্থানে কলাগাছ দেওয়া হয় মাটিচাপা।
এরপর থেকে ৩৫ বছর ধরে চাঁন মিয়া শাহের পুরাতন বাড়িতে ওই ফকিরের কবরকে ঘিরে প্রতিবছর জানুয়ারীর ১০ ও ১১ তারিখে ওরশ মাহফিল করেন ভক্তরা। অপরদিকে বারৈচা দক্ষিণপাঁড়া গ্রামের ৯ নং ওয়ার্ডে চাঁন মিয়া শাহের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়ির আঙ্গিনায় গোসলের স্থানে মাটিচাপা দেওয়া কলাগাছের উপর তৈরী করা হয় আরেকটি মাজার। কলাগাছের উপর তৈরী করা মাজারটিতেও একই তারিখে ওরশ করেন ভক্তরা।
নতুন বাড়িততে কলাগাছের উপর তৈরী করা মাজারের নাম দেওয়া হয় ফুলবাগান দরবার শরীফ। এই দরবার শরীফের প্রথম পীরজাদা হন প্রয়াত ফকির চাঁন মিয়া শাহের দ্বিতীয় ঘরের বড় ছেলে মাসুম শাহ। মাসুম শাহ বর্তমানে শিবপুর মডেল থানার একটি জোড়া খুন মামলার আসামী হয়ে জেল হাজতে রয়েছেন। তার অবর্তমানে ওই মাজারের পীরজাদা ছোট ছেলে ফরিদ শাহ।
আগামী ১০ ও ১১ জানুয়ারী ভূয়া মাজারে ওরশের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে ওরশের নামে ভন্ডামী, মাদকের আসর ও অনৈতিক কার্যকলাপ করা হয় বলে অভিযোগ এলাকাবাসির। প্রতি বছর ওরশের নামে অনৈতিক কার্যকলাপ, অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি ও নাচগানের কারণে মসজিদের মসুল্লিদের নামাজে ব্যাঘাতসহ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার বিঘ্ন ঘটে। লাশবিহীন ওই ভূয়া মাজারের ওরশ বন্ধের দাবি এলাকাবাসির।
মুক্তার হোসেন হোসেন নামে একজন অভিযোগকারী বলেন, কলাগাছকে মাটিচাপা দিয়ে এখানে প্রায় ৩৫ বছর ধরে ওরশ করা হচ্ছে। ওরশের নামে এখানে গান বাজনা মাদকসহ নানা অপকর্ম হয়ে থাকে। তাই ওরশের নামে এসব অপকর্ম বন্ধ করার জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
কলাগাছের মাজারের খাদেম প্রয়াত পীর চাঁন মিয়া শাহের দ্বিতীয় ঘরের ছেলে ফরিদ শাহের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে প্রয়াত চাঁন মিয়া শাহের দরবার শরিফ। এটি মাজার নয়। কলাগাছ দাফনের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা কৌশলে এড়িয়ে যান।
অন্য মাজারের খাদেম প্রয়াত চাঁন মিয়া শাহের নাতি মো. বুরহান উদ্দীন বলেন, ওইখানে প্রথম কবর করা হয়েছিল। কিন্তু সে কবরে লাশ দাফন করা হয়নি। একারণে কলা গাছ দাফনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে ওইখানে যেহেতু উনার ছেলেরা আছে তাই সেখানে ওরশ করতেই পারেন।
বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তানভীর আহমেদ বলেন, লিখিত কোন অভিযোগ না পেলেও এ ব্যাপারে এলাকার কেউ একজন আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। দেখি কী করা যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা জান্নাত তাহেরা বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি পক্ষগুলোকে ডাকবো। তারপর তাদের সাথে কথা বলে দেখি কী করা যায়।