কোটিপতি থেকে ‘পথের ফকির’
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে রাজধানীর বঙ্গবাজার। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়েছে অনেক দূর পর্যন্ত। পুরো এলাকা ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের খবর জানা যায়নি।
মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের ৪৩টি ইউনিট বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক।
রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়বাহ আগুনে ছয়টি মার্কেটের পাঁচ থেকে ছয় হাজার দোকান পুড়ে গেছে। দোকান মালিকসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিগস্ত হয়েছে।
বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও এনেক্সকো টাওয়ারের পরিচালক জহিরুল ইসলাম এমনটা দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষ এ মাসে মালিকরা মালামাল রির্জাভ করে রেখে ছিল ব্যবসায়ীরা। সবার স্বপ্ন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সব শেষ হয়ে গেলো।
বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী জসিম উদদীন বলেন, “বঙ্গবাজারে তার ৬টি দোকান ও গোডাউনে প্রায় ৩ কোটি টাকার মালামাল ছিল। ক্যাশে ২০ লাখ টাকা ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন তিনি নিঃস্ব
ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে দোকান, গোডাউনে কোটি কোটি টাকার মালামাল তুলেছিলেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) মার্কেটটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোটিপতি ব্যবসায়ীরা মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এখন “পথের ফকির”।
সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের সামনে তার সঙ্গে হলে তিনি আরও বলেন, “ঈদের বাজারে এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে তাদের যে ক্ষতি হয়েছে। তা কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়। ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠে শুনি আগুন লাগছে। এসে দেখি সব শেষ।”
বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্মিলিত সাহায্যকারী দল, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাহায্যকারী দল এবং স্থানীয় জনতা। ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায় তারা।
বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিস। সংস্থাটির মিডিয়া শাখার কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার বলেন, বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
তবে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার কথা জানালেও ঘটনাস্থলে বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বঙ্গ মার্কেটের বেশিরভাগ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বঙ্গবাজারে অন্তত ছয়টি মার্কেটে আগুন লাগে। এর মধ্যে শুধু বঙ্গ মার্কেটেই ২৯০০ দোকান পুড়ে গেছে। এসব দোকানে কাজ করেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ।
বঙ্গবাজার মার্কেট, ইসলামিয়া মার্কেট, বঙ্গ ১০ কোটি মার্কেট, আদর্শ মার্কেট- এই চারটি মার্কেট এক জায়গায় হওয়ায় মূলত সবগুলোকেই লোকজন বঙ্গবাজার মার্কেট হিসেবে ডেকে থাকেন। এখান থেকে রাস্তার উল্টো পাশে এনেক্সকো ও বঙ্গো হোমিও মার্কেটেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল।
মঙ্গলবারের এই অগ্নিকাণ্ডে ১২ হাজারের ওপরে দোকান পুড়ে গেছে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন আশপাশের দোকানপাটের মালিকেরা। তারা তাদের মালামাল নিরাপদস্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। তবে মানুষজনের ভিড়ের কারণে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।