নিজস্ব প্রতিবেদক
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৮ শিশু, ৪ পুরুষ ও ১২ জন নারী রয়েছেন। নিহত ২৪ জনের মধ্যে ২০ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এ ঘটনায় পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় এখনও উদ্ধার কাজ চলছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে উদ্ধার কর্মীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
নৌকা ডুবে ১৬ জনের মৃত্যু হয়। আর আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর সেখানে ৮ জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে ২০ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে।
তারা হলেন পলি রানী (১৪), লক্ষী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দিপঙ্কর (৩), প্রিয়ন্ত (৩), খুকী রানী (৩৫), প্রমিলা রানী (৫৫), তারা রানী (২৪), শোনেকা রানী (৬০), ফাল্গুনী রানী (৫৫), প্রমিলা রানী (৭০), ধনো বালা (৪৭), সুমিত্রা রানী (৫৭), সফলতা রানী (৪০), সিমলা রাণী (৩৫) হাসান আলী, (৫২), উশোশী (১), তনুশ্রী (১), শ্রেয়শী (১)।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রবিবার বিকেলে মহালয়া উপলক্ষে পাঁচপীর, বোদা, মাড়েয়া, ব্যাঙহারি এসব এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকা যোগে বদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন। নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে মাঝ নদীতে পৌঁছালে যাত্রীদের চাপে নৌকা ডুবে যায়। এ সময় কিছু মানুষ সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও বেশির ভাগ যাত্রীই এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদে জরুরি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। মরদেহ শনাক্তসহ যে কোনো প্রয়োজনে ০১৭০৮-৩৯৭৭১৮ ও ০১৭১৯-৩৪৭১৭৩ এদুটি নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। নিহত সদস্যের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।
নৌকাডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া সুবাস চন্দ্র রায় নামে এক যাত্রী বলেন, ‘এ ঘটনার সময় আমিও নৌকায় ছিলাম। নৌকায় দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। আমরা নৌকায় ওঠার পরপরই পানি ঢুকতে শুরু করে। এ সময় মানুষজন নৌকার মধ্যেই হুড়োহুড়ি শুরু করে। যে পাশেই যাচ্ছিলাম, সেপাশেই নৌকায় পানি ঢুকছিল। এ সময় আমরা পাঁচজন বন্ধু কোনোমতে সাঁতার কেটে প্রাণে বেঁচে যাই।
তিনি আরও জানান, অন্য যাত্রীরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি করছিল। ওই মুহূর্তের অবস্থা বর্ণনা করার মতো না। এত মানুষ মারা যাবে, তা বুঝতে পারিনি।
এ বিষয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলেমান আলী জানান, ডুবে যাওয়া নৌকাতে ৭০ থেকে ৮০ জনের মতো যাত্রী ছিল। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় ঘাট থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর নৌকাটি ডুবে যায়। মরদেহ শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে। এপর্যন্ত ২৩ জনের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে।প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদেরকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সফিকুল ইসলামসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিটের উদ্ধার কাজ পর্যবেক্ষণ করেন।