নিজস্ব প্রতিবেদক
আর কখনো স্বামীকে অত্যাচার নির্যাতন করবে না এমনই মোছলেখা দিয়ে তালাক দেয়া স্ত্রী শান্তা আক্তার (৩২) পূনরায় স্বামীর বাড়ী আসে। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে আনার সময় দেওয়া কোন কথাই সে রাখেনি। গত শুক্রবার স্বামী এরশাদ মিয়াকে ছুরিকাঘাত করে সেটারই নজির রাখলেন শান্তা।
এরশাদ মিয়া নরসিংদী পৌর শহরের উত্তর সাটিরপাড়া মহল্লার মৃত মকুল হোসেনের ছেলে। তার স্ত্রী ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার বিজয়নগর থানাধীন ফুলবাড়িয়া গ্রামের নোয়াজ আলীর মেয়ে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এরশাদ মিয়া পরিবারের পছন্দে প্রায় ৯ বছর পূর্বে শান্তা আক্তারকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে শুধু তাই নয় পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে ও ঝগড়া বিবাদ লাগাতে সব সময় সচেষ্ট থাকতো। বিয়ের প্রায় এক বছরের মাথায় তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি ছেলের সন্তানের জন্ম নেয়। কিন্তু এরপর স্ত্রী শান্তা বেকমে ঝগড়া প্রাসাদ বন্ধ হয় না। এ অবস্থায় মুখ বুজে সহ্য করতে থাকে এরশাদ। কিছুদিন পর জীবিকার তাগিদে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পাড়ি দেয়। এরশাদ বিদেশ যাওয়ার কিছুদিন পর শান্তাও বাপের বাড়ি চলে যায়। প্রায় বছর দুবাই থাকার পর দেশে ফিরে আসে। দেশে ফিরে আসার পর স্ত্রীকে আনতে শ্বশুরবাড়ি গেলে সেখানেই তাকে রেখে দেয় স্ত্রী শান্তা বেগম। পরে আখাউরা রেলস্টেশনের পাশে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রী শান্তাকে নিয়ে সেখানে বসবাস করতে থাকে। মাস দুইমাস সেখানে থাকার পর স্ত্রীর অত্যাচার নির্যাতনের হাত থেকে বাচঁতে আবারও বিদেশে চলে যায় এরশাদ। স্ত্রী শান্তার অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রাটা এতোটাই ছিলো যে স্বামী এরশাদের গায়ে হাত তুলতে কোন রকম দ্বিধাবোধ করতো না। হরহামেশাই স্বামীর শরিরে হাত চালাতো স্ত্রী শান্তা। আর তার একাজের জন্য ইন্দন দিতো তার বড় ভাই শামীম।
বিদেশে যাবার পর আইনজীবীর সহযোগীতায় শান্তাকে তালাক দেয় এরশাদ। বছর তিনেক পর এরশাদ বিদেশের পাঠ চুকিয়ে দেশে ফিরে আসে। সে দেশে ফিরে আসলে তার স্ত্রী বাদী হয়ে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া আদালতে এরশাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং যৌতুকে দাবীর পৃথক দুটি মামলা করে। প্রথম মামলায় এরশার ছাড়া তার ভাইবোন ৪ জনকে আসামী করা হয়। এই মামলায় এরশাদ বেশ কয়েকদিন কারাভোগ করে। কারাভোগ কালেও স্ত্রী শান্তা তার শয়তানির জাল বিছাতে থাকে। সে তার স্বামী এরশাদকে নরসিংদী কারাগার থেকে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া কারাগারে স্থানান্তর করিয়ে নেয়। পরে নিজেই জামিনদাতা হয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। জেল থেকে বের করার পর এরশাদকে ছাড়িয়ে আনার পর শান্তা তালাক দেয়া স্বামীকে তার বাবার বাড়ীতে নিয়ে নিয়ে যায় এবং তাকে পূনরায় ঘরে তোলার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। সে সময় এরশাদের বাড়ীর লোকজন শান্তাকে তাদের ও তার স্বামী এরশাদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে বলে। ঘরে তোলার পর সে মামলা তুলে নিবে বলে সে তাদেরকে জানিয়ে দেয়। পরে আদালতের মাধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে তাকে ঘরে তোলা হলেও আজও তার করা ওই দুটি মামলা তুলে নেয়নি সে।
এদিকে দেশে ফিরে পুনরায় রাজ মিস্ত্রী’র কাজ করতে থাকে। শুক্রবার কাজ শেষে সন্ধার পর বাসায় ফিরে গোসল গা ধুয়ে ফ্রেস হলে স্ত্রী শান্তা তর্ক শুরু করে দেয়। তাদের এই তর্ক প্রায় ঘন্টাখানে চলার পর এক পর্যায়ে রাত ৯ টার দিকে শান্তা তার স্বামী এরশাদ মিয়াকে ছুরিকাঘাত করে। এসময় এরশাদ হাত দিয়ে তা ফিরাতে গেলে তার দুই আঙ্গুল কেটে যায়। এতে তার কাটা আঙ্গুলগুলো প্রচুর রক্তক্ষণ হতে থাকে। এ অবস্থায় বাড়ীর লোকজন তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার কামড়ানো, চিমড়ানোর দাগসহ শরীরে বিভিন্ন অংশে নকের আচঁড়ের দাগ আছে বলে কর্তব্য চিকিৎসক জানান।
এ অবস্থায় এরশাদের জানমালের সংশয় প্রকাশ করেছে তার বড় ভাই আলম মিয়া। তিনি আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শান্তা বেগম যেকোনো সময় যে কোন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। আমি আমার ছোট প্রাণের আশঙ্কায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এব্যাপারে শান্তা বেগম সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি আমার স্বামীকে কিছুই করিনি বরং সে আমাকে ওল্টো মারধর করেছে। আদালতে আমার যে মামলা আছে সেটাকে হালকা করার জন্য তারা আমার নামে মিথ্যা রটনা রটাচ্ছে।
এবিষয়ে নরসিংদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম জানান, স্বামীকে মারধর করেছেন স্ত্রী থানায় এমন অভিযোগে সরেজমিনে গিয়ে স্বামী এরশাদ মিয়ার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। উক্ত বিষয়ে একটি জিডি হয়েছে। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তদন্ত করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।