মো. শাহাদাৎ হোসেন রাজু
আর মাত্র একদিন বাদেই নরসিংদীর মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন । প্রায় সাড়ে ৭ বছর পর আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার এ সম্মেলন হতে যাচ্ছে।
সম্মেলনকে ঘিরে জেলা জুড়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস এখন তুঙ্গে। পদ পেতে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতা তৎপর রয়েছেন। শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে বায়োডাটা জমা দিয়েছেন অন্তত দুই ডজন নেতা। জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীরা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পদ ভাগাভাগির দৌড়ে আছেন। এর মধ্যে কে কে হতে চলেছেন জেলা আওয়ামী লীগের কর্ণধার। সভাপতি ও সাধারণ এই পদ ভাগাভাগি হতে পারে দৃশ্যমান দুই বলয় থেকে, সংশ্লিষ্ট অনেকে এমনটাই মনে করছেন।
নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগ দীর্ঘদিন ধরে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দলীয় কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যার একটির নেতৃত্বে সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নরসিংদী-১ (সদর) আসনের বর্তমান সাংসদ নজরুল ইসলাম হিরু এবং অপরটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারই এক সময়কার ঘনিষ্ট সহচর নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র, শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল।
বিগত সময় গ্রুপ দুটি দলীয় কর্মসূচিগুলো আলাদা আলাদা মঞ্চে পাল্টাপাল্টি আবার কখনো কখনো মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পালন করতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয় খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে পর নিন্দা ও পর চর্চায় করতেও দ্বিধা বোধ করেনি। যার ফলে দলীয় ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী মনে করছে। এছাড়াও নিজেদের বলয় মজবুত করতে এবং পরবর্তী সম্মেলনে নিজেদের পাল্লা ভারী করতে ও সমর্থন পেতে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও শহরের ওয়ার্ডগুলোতে আলাদা আলাদা কাউন্সিল করে অনুসারীদের দিয়ে কমিটি গঠন করে। যা দলীয় গঠনতন্ত্র বহির্ভুত।
সম্মেলনে ঘোষিত কমিটিতে ত্যাগী তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতারা স্থান পাবে কিনা তা নিয়েও অনেকে শঙ্কায় রয়েছেন। কারা পাচ্ছেন পদপদবি— তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হাটবাজারে একটাই আলোচনা— আওয়ামীলীগের সম্মেলন। জেলাবাসীর দৃষ্টি ১৭ সেপ্টেম্বরের সম্মলনের দিকে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী শনিবার দুপুর ২টায় মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়াম মাঠে নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক এমপি। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি।
এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আড়াইহাজারের ছনপাড়া থেকে নরসিংদীর ভেলানগর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ছেয়ে গেছে নেতাদের ছবি সংবলিত তোরণে। এছাড়াও মহাসড়কের দুই পাশে শোভা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি সমন্বিত বড় বড় বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন।
দলের হাই-কমান্ডের নজরে আসতে চলছে প্রচার-প্রচারণা সেই সাথে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নরসিংদী শহরের আশপাশ।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তৃণমূল থেকে উঠে আসা দলের ত্যাগী ও দীর্ঘদিন ধরে পদ বঞ্চিত থাকা অনেক নেতা।
সভাপতি পদে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে। তারা হলেন- নরসিংদী-১ (সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম হিরু (বীরপ্রতীক), নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কামরুল আশরাফ খান পোটন, নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিএম তালেব হোসেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল ইসলাম ভূঁইয়া, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় তাঁতীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোন্তাজ উদ্দীন ভূঁইয়া, সাবেক পৌর মেয়র ও বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া, নরসিংদী শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফ হোসেন সরকার, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কৃষ্ঞ গোম্বামী, সাবেক যুবলীগ নেতা আসাদুজ্জামান খোকা।
জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা মূলত দুটি ধারায় বিভক্ত। প্রকাশ্যে এ দুটি পক্ষ বিরোধ ও বিভাজনে জড়িয়ে পড়েছে। দুটি পক্ষকে ঘিরেই নেতাকর্মীরা সক্রিয় থাকেন। যে কারণে সম্মেলনের আগে এই দুই বলয়ের মধ্যে কমিটি ভাগাভাগির বিষয়টি আলোচনায় আসে। দুটি পক্ষকে একটি প্লাট ফর্মে আনতে হলে দুই বলয় থেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভাগাভাগি করতে হবে বলে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী এমন মনে করছে। আর যদি এমনটা হয়ে একটি পক্ষ থেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা দেওয়া হয় তাহলে অন্য পক্ষের তৃণমুল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মাঝে হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। আর এমনটা হলে সেদিন যেকোন সময় সংর্ঘষের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি হতে যাচ্ছে। এ কমিটি ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলে উচ্ছাস আছে।
এবারের কমিটিতে যোগ্য নেতারাই আসবেন। কারণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ দুই পদে প্রার্থী বাচাই করবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে। সম্মেলনে পদপ্রত্যাশীদের সব ধরণের তথ্যই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাধ্যমে তিনি পেয়েছেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই দুই পদে যোগ্যতা যাচাই পৃর্বক তিনি নেতা বাচাই করে তাদের হাতে জেলা আওয়ামী লীগের দ্বায়িত্ব তুলে দিবেন।