নিজস্ব প্রতিবেদকঃনরসিংদীর শিবপুর উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের সৈয়দনগর এলাকার মৎসখামার গুলো থেকে সেচ পাম্প চুরির হিড়িক পড়েছে।
আর এসকল চোরদের মদদ দিয়ে আসছে মাবুলসহ স্থানীয় অবৈধ ভাঙ্গারীর দোকান মালিকরা।
এসকল সংঘবদ্ধ সেচ পাম্প চোর চক্রের উৎপাতে অতিষ্ট হয়ে অধিকাংশ মৎসখামারিরা খামার বন্ধ করে দিয়েছে।
মৎসখামারের জন্য বসানো সেচ পাম্পগুলো দীর্ঘদিন ধরে চুরি হয়ে আসূ। খামারগুলোতে পাম্প বসানোর কয়েকদিনের মাথায় ওই চোর চক্র তা চুরি করে নিয়ে যেত। উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ মৎস্য খামারিরাই এই চোর চক্রের উৎপাতের শিকার।
গত ২৭ এপ্রিল পুটিয়া ইউনিয়নের সৈয়দনগর দড়িপাড়া গ্রামের আলম নামের এক খামারি তার খামার থেকে চুরি যাওয়া মটরসহ চোর চক্রের দুই সদস্যকে একটি ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করার সময় হাতেনাতে ধরার পর বর্তমানে কয়েকদিন ধরে এই চোরদের উৎপাত বন্ধ রয়েছে।
জানা যায়, শিবপুর উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের সৈয়দনগর দড়িপাড়া গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষ মৎসখামার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। প্রায় প্রত্যেক খামারির একাধিক পুকুর রয়েছে। খামারিরা তাদের মৎসখামারের পুকুরগুলোতে অবাধ পানির ব্যবস্থা করতে মটর (পানির পাম্প) দিয়ে পানি দিত। বেশ কয়েক বছর ধরে এলাকার এই মৎসখামার গুলোতে একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র মটর চুরি করে আসছিল। এতে করে গত কয়েক বছরে এই এলাকা থেকে এই চোর চক্র প্রায় ৩ হাজারের অধিক মটর চুরি করেছে বলে ভুক্তভোগি খামারিরা জানায়।
এর মধ্যে আলম মিয়ার খামার থেকে ১৫টি, মো: রাকিব হাসানের খামার থেকে ১৬টি, সোহরাব উদ্দিন মোল্লার ৮টি, কবির হোসেনের ৮টি, সাইদুল ইসলামের ২টি, মফিজ উদ্দিন মোল্লার ২টি, তোফাজ্জল হোসেনের ২টিসহ অন্যান্য খামারিদের একাধিক মটর চুরি গেছে বলে জানায়।
গত ২৭ এপ্রিল আলম মিয়া তার খামার থেকে চুরি যাওয়া একটি মটর মুন্সেফেরচর(ইটাখোলা বাজারের পূর্ব পাশে) এলাকার মাবুলের ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করার সময় সৈয়দনগর দড়িপাড়া গ্রামের মোখলেছ মিয়ার ছেলে আবদুল্লাহ ও তার ভাগিনা পাবেলকে হাতেনাতে ধরে। এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্যের বিচারের আশ্বাসে এবং মাবুলের দোকানের কর্মচারীর বাবুল মিয়া ক্ষতিপূরণ দেওয়ার শর্তে লিখিত দিয়ে চোরদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এরপর থেকে ওই দুই মটর চোরসহ মাবুলের ভাঙ্গারি দোকারের কর্মচারি বাবুল গা ঢাকা দেয়।
খামারিরা জানায়, ওই ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত আর কোন খামার থেকে কোন মটর চুরি যায়নি।
এদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য বিচারের আশ্বাস দিলেও এখনও পর্যন্ত এর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
খামারিরা মটর চোরদের হাত থেকে নিস্তার চায়।
এঘটনায় এলাকায় সকল খামারি এক হয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করলে শনিবার সরেজমিনে সৈয়দনগর দড়িপাড়া গ্রামে গেলে ভুক্তভোগি খামারি আলম বলেন, ‘ দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার খামারিরা চোরের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ ছিল।
এ পর্যন্ত তার খামার থেকে মোট ১৫টি মটর চুরি গেছে।চোরেরা মুন্সেফেরচর এলাকার মাবুলসহ একাধিক ভাঙ্গারির দোকানে এসকল চোরাই সেচ পাম্প বিক্রি করে। যত্রতত্র অবৈধভাবে ভাঙ্গারির দোকান গড়ে ওঠায় এলাকায় দিন দিন চোরের উপদ্রব বেড়ে চলেছে।চোরের হাত থেকে রেহাই পেতে চোরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ মাবুলের মতো যারা চোরদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে লালনপালন করে এমন লোকদের চিহ্নিত করে এলাকার সকল অবৈধ ভাঙ্গারীর দোকানগুলো বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
অপর খামারি স্কুল শিক্ষক মো: রাকিবুল হাসান জানান, গত এক বছরে তার খামার থেকে ১৬টি মটর চুরি গেছে। তিনি বলেন, মাছের খাদ্যের দাম এতোটাই বেড়েছে যে সারা বছর মাছ চাষ করে আমাদের পুঁজি তোলাই বর্তমানে কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ওপর খামার থেকে পাম্প চুরি যাওয়ায় আমরা অনেকটাই বেসামাল হয়ে পড়েছি।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে মুন্সেফেরচর এলাকার মাবুলের ভাঙ্গারি দোকানে গিয়ে বাবুলের কথা জানতে চাইলে দোকানের অন্যান্যরা জানায় বাবুল দোকান কর্মচারি ছিল। এখন সে আর এই দোকানে কাজ করেনা। এ সময় সংবাদকর্মীরা দোকান মধ্যে অনেকগুলো টিউবওয়েল ও বিভিন্ন পাম্প মজুদ দেখতে পেয়ে এগুলো চুরি মাল কিনা জানতে চইলে দোকানী মাবুল উত্তেজিত হয়ে সংবাদকর্মীদের উপর চড়াও হয়। ‘ সে সংবাদকর্মীদের বলে টাকা লাগলে টাকা নেন কিন্তু এতো কিছু জানাতে চান কেন ? আপনারা সব কিছু ঘুরে গেখার দরকার কি ?।’ আপনাদের যেটা লাগবে বলেন দিয়ে দেই।
আপনাদের মতো অনেক সাংবাদিক আমার পকেটে থাকে। আপনারা যেভাবে প্রশ্ন করছেন প্রশাসনের লোকজন ও আমার কাছে কোন সময় জানতে চায় না। কারণ প্রত্যেককেই আমি সম্মানি দিয়ে ব্যাবসা করি। ভবিষ্যতে তার ভাঙ্গারীর দোকানগুলোতে গেলে বুঝেশুনে যাওয়ার হুমকি ও দেন তিনি৷
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল বাশারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি চাই এলাকার খামারিরা চোরের উপদ্রুপ থেকে রেহাই পাক। এ জন্য আমিও চোরদের বিচার দাবী করছি।