নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নরসিংদীর যোশর ইউনিয়নে বাড়িঘর ভাঙচুর করে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকাসহ অর্ধ কোটি টাকা লুটপাটের মামলার আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে মামলার বাদিকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া সহ বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘরের মালামাল ও আসবাবপত্রসহ ১৫ লক্ষাধিক টাকার সম্পদ পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রবিবার (১৩ নভেম্বর) রাত সাড়ে নয়টার দিকে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের পাহাড়পুলদী গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হক’র ছেলে মো. মানিক মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
সোমবার (১৪ নভেম্বর)সকালে প্রতিবেদক টিম সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়।
সেখানে গিয়ে দেখা যায় দুষ্কৃতকারীদের দেয়া আগুনে একটি চারচালা বিশিষ্ট টিনের ঘর, ঘরের ভেতরের খাট, আলমারি, সুকেছ, টিভি, ফ্রিজ ও ড্রেসিংটেবিলসহ সম্পূর্ণ মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়াও আগুনের লেলিহান শিখার জন্য বাড়ির আশেপাশের অসংখ্য ফলজ ও বনজ গাছপালা ফলসহ পুড়ে গেছে।
ভুক্তভোগী মানিক মিয়া বলেন, কিছুদিন পূর্বে সিফাত মিয়া নামে আমার এক ভাগিনা মূল্যবান গহনাগাটি ও টাকা পয়সা নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসে। এই সুযোগে যোশর এলাকার বশির মৃধার ছেলে তানভীর আহমেদ জিকু মৃধা(৩৮), মৃত আনিছুর রহমানের ছেলে আশরাফুল আলম আকরাম(৪২) ও হাবিবুর রহমান মৃধার ছেলে শাহিন মৃধা(৪০) তাদের সঙ্গীয় ১৪/১৫ জনের দলবল সহ গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখ রাত সাড়ে দশটার দিকে আমাদের বাড়িতে অতর্কিত হামলা করে বাড়িঘর ভাঙচুর, ফাঁকা গুলি বর্ষণ সহ আমাদের টিনশেড বিল্ডিংয়ের কেচি গেটের তালা ভেঙে আমার ভাগিনা সিফাতের বিদেশ থেকে আনা ২২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৫ লক্ষ টাকা, ৩ লক্ষ টাকার ফার্নিচার লুট ও ৮ লক্ষ টাকার মালামাল ভেঙ্গে ফেলা সহ প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করে ।
ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার)এর ৪/৫ ধারা তৎসহ দন্ডবিধি আইনের ৩৯৫/৩৯৭ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় তারা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এসে আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি, ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। গতকালের রবিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে আমরা কয়েকজন মিলে যোশর বাজার পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হাসান রাশেদের দোকানে স্থানীয় একটি ফুটবল খেলার বিষয়ে পরামর্শের জন্য সমবেত হই। এসময় বশির মৃধা ও তার ভাতিজা তৌকির মৃধা আমাকে সকলের সামনে প্রকাশ্যে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে উপস্থিত সবাই আমাকে চলে আসতে বললে আমি আমার নরসিংদীর বাসায় চলে যাই। এরই জের ধরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে জিকু, শামিম, তৌকির ও আকরাম সহ অজ্ঞাত ১০/১২ জন মিলে আমার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আমার ঘরের মূল্যবান আসবাবপত্র সহ ১৫ লক্ষ টাকার মালামাল পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। বর্তমানে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এব্যাপারে প্রশাসনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
যোশর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুল গফুর ভুঁইয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গতকাল রাতে মানিকের বাড়িতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান, আমি এবং বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক সহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই কিন্তু ততক্ষণে ঘর ও ঘরে থাকা সকল মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
তবে কে বা কারা এঘটনা ঘটিয়েছে তা জানেন না বলে ও জানান তিনি।
এব্যাপারে জোশর ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
যোশর বাজার পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো.এনামুল হাসান রাশেদ বলেন, গতকাল বিকেলে একটি ফুটবল খেলার বিষয়ে আমরা সবাই আমার দোকানে বসি। কিন্তু আমার একটি জরুরী কাজ থাকায় আমাকে চলে যেতে হয়। পরে এসে মানিকের সাথে বশির মৃধা ও তার ভাতিজা তৌকির মৃধার কথাকাটাকাটি হয়েছে বলে শুনতে পাই।
বাজার পরিচালনা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের শামিম বলেন, গতকাল মানিকের সাথে বশির মৃধা ও তার ভাতিজা তৌকির মৃধার কথাকাটাকাটির সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য, বাজার পরিচালনা পরিষদের সহ-সভাপতি তোফাজ্জল মেম্বার ও হাফিজ উদ্দিন সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
তবে রাতে মানিকের বাড়িতে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি।
অভিযুক্ত বশির মৃধার দোকানে গিয়ে এব্যাপারে তার বক্তব্য জানতে চাইলে সাংবাদিকরা কার কথায় তার দোকানে গিয়েছে জানতে চেয়ে বলেন, এবিষয়ে আপনারা কি কোন সমাধান দিতে পারবেন? যেহেতু কোন সমাধান দিতে পারবেন না তাই আপনাদের কাছে আমি কোন বক্তব্য দিতে বাধ্য নই। যদি এব্যাপারে কিছু বলতে হয় তাহলে পুলিশের কাছে বলব। আর তা না হলে বিচার জমিয়ে বড় করে মঞ্চ বানিয়ে সেখানে মাইক দিয়ে বলব।
এব্যাপারে জানতে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সালাউদ্দিন এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।