মো. শাহাদাৎ হোসেন রাজু
নরসিংদী জেলার কৃষকরা সরিষা চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন। জেলা গ্রাম এলাকা বর্তমানে হলুদের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায় সেইদিকে সবুজ মাঠ জুড়ে হলুদ রঙের সরিষার ফুলের হাসি। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় নরসিংদীতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সরিষার চাষ। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে এবার অধিক ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় সরিষার চাষে খরচ ও পরিশ্রম দুটোই কম হওয়ায় অনেক কৃষক এই ফসল চাষে ঝুকেছেন। সরিষার তোলার পর একই জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে।
সরিষা বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়। তবে বেলে বা দো-আঁশ মাটিতেও সরিষা হয়। যেহেতু বেলে ধরনের মাটিতে সেচ দেওয়ার পর পানি চুইয়ে নিচে চলে যায় এবং এ সময় পানির সাথে বেশ কিছু খাদ্যোপাদানও নিচে চলে যায়। এসবের মধ্যে বোরন অন্যতম।
সরিষা চাষে প্রচুর রোদ, কম তাপমাত্রা ও জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকা প্রয়োজন। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ও মাটিতে রসের অভাব হলে বীজের আকার ছোট হয় ও বীজে তেলের পরিমাণ কমে যায়। এজন্য বাংলাদেশে রবি মৌসুমেই সরিষার চাষ করা হয়ে থাকে। মধ্য কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ (প্রথম থেকে মধ্য নভেম্বর) পর্যন্ত সরিষার বপন সময়। সরিষার বীজ ছোট বলে ৪-৬টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরি করতে হয়। জমিতে যাতে বড় বড় মাটির ঢেলা ও আগাছা না থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। সারিতে ও ছিটিয়ে উভয় পদ্ধতিতেই সরিষার বীজ বপন করা যায়। সারিতে বুনলে, সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি. এবং সারিতে বীজ পরপর বপন করে যেতে হয়। কাঠের ছোট লাঙ্গল ব্যবহার করা যেতে পারে, যা দিয়ে মাটির আড়াই থেকে তিন সেমি. গভীরে বীজ বপন করে তা মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। আর ছিটিয়ে বুনলে শেষ চাষের পর বীজ বপন করে মই দিয়ে জমি সমান করে দিতে হয়। সরিষার বীজের সঙ্গে বপনের সুবিধার জন্য ঝুরঝুরে মাটি বা ছাই মিশিয়ে নেয়া যেতে পারে।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৬টি উপজেলায় ৫ হাজার ৭৮৪ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে প্রায় ২০৪ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। চলতি সরিষা মৌসুমে নরসিংদী জেলায় চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৫৮০”হেক্টর জমিতে। এবছর লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে জেলায় সরিষার চাষাবাদ হয়। সেই উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার মেট্রিক টন।
সরিষা নরসিংদী জেলার সব উপজেলায় কমবেশী উৎপাদন হয়। তবে জেলার নরসিংদী সদর ও রায়পুরা এই দুই উপজেলায় অন্য চারটি উপজেলার চেয়ে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশী জমিতে সরিষা উৎপাদন হয়।
সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর , পলাশ ৯৫ হেক্টর, শিবপুর ১৬৩ হেক্টর, মনোহরদী ২৬৫ হেক্টর, বেলাব ২২১ হেক্টর ও রায়পুরায় এক হাজার ৬ হেক্টর ৬৯০ জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায় বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষার ফুলের সমারহ। ফুলে ফুলে ভরে গেছে সরিষার ক্ষেত। এসময় চাষিরা জানান, আমন ধান কাটার পর জমি কয়েক মাসের জন্য পরিত্যক্ত থাকে ওই জমিতে অতিরিক্ত ফসল হিসাবে সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। ইতোমধ্যে কোন কোন ক্ষেতে সরিষার দানা বাধতে শুরু করেছে। আবার কোথাও ফুল ফুঠেছে।
সদর উপজেলার আলিপুরা গ্রামের সরিষা চাষি জামাল মিয়া জানান, এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫ শত টাকা। ফলন পাওয়া যায় ৫ থেকে ৭ মন। প্রতিমন সরিষার বাজার মূল্য ৮শ থেকে ৯শ টাকা।
রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ গ্রামের চাষি হযরত আলী বলেন, ‘এবার প্রায় ১০০ শতাংশ জমিতে বারী ১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছি বাম্পার ফলনের আশা করছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক ড. মো. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ জানান, সরিষা চাষে কৃষকরা যে ভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছে তা অত্যন্ত ইতি বাচক। এটি কৃষি ক্ষেত্রে সরকারের আরও একটি সাফল্য। দেশি জাতের সরিষার ৬০ থেকে ৭০ দিনে এবং উচ্চ ফলন শীল জাতের সরিষা উঠতে সময় লাগে ৭৫ থেকে ৮০ দিন। তিনি আরও বলেন, সরিষার আবাদ বৃদ্ধি হলে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়বে এবং তেলের আমদানী নির্ভরতা কমে যাবে।