নরসিংদী প্রতিনিধি
“আমরা এমন ভাগ্য কবে হবে, ভক্তের চরণ ধুলি আমার অঙ্গে লাগবে” মুখরিত ছিলো শ্রীশ্রী বাউল ঠাকুরের আখড়াধামে। সোমবার (২১ মার্চ) রাতে বীরপুর শ্রীশ্রী বাউল ঠাকুরের আখড়াধামে মঙ্গলঘট স্থাপনের মধ্যে দিয়ে শুরু হলো ২৪ প্রহর ব্যাপী ভূবন মঙ্গল শ্রীশ্রী হরিনাম সংকীর্তন।
অধিবাস পরিবেশন করেন শ্রী নিউটন দেবনাথ। এসময় শ্রীশ্রী বাউল ঠাকুরের আখড়াধামে মুখরিত ছিলো হাজারোও ভক্তদের আগমন।
আখড়াধাম সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর পৌর শহরে বীরপুর এলাকায় হাঁড়িদোয়া নদীর কুল ঘেঁষে প্রায় শতাধিক বছরের আগে এক বাউল সাধক এখানে বটগাছের নিচে সাধন করতেন। সেই থেকে ছোট একটি টিনের ঘরে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহের পূজা অর্চনা করতো। প্রতি বছর ফাল্গুনী পূর্ণিমা উপলক্ষে দোল পূর্ণিমা উৎসবে দিন ব্যাপী আবীর রঙে রাঙিয়ে যেতো আখড়াধাম। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিধিমতে সংকীর্তন করতে হলে আগে মাটি বা পিতলের তৈরি ঘটকে নানা উপাচারে সজ্জিত করে। তার গায়ে সিদুর দিয়ে স্বস্তিকা চিহ্ন অঙ্কন করে, পঞ্চশস্য, পঞ্চগুড়ি, পঞ্চপল্লব, পঞ্চরত্ন, জল তথা গঙ্গাজল, মৃত্তিকা বা মাটি, নারিকেল বা ডাব, গামছা অথবা বস্ত্র, কান্ডকাঠি বা তীরকাঠি ইত্যাদি দিয়ে দেবতার প্রতিমার সামনে প্রতিস্থাপন করা হয় । এই মঙ্গলঘটের জল আনতে নারীরা নতুন বস্ত্র পরিধান করে কেউ প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করে মাথায় কুলা এবং কেউ মাটির কিংবা পিতলের কলস নিয়ে নদীর ঘাটে যেতে দেখা কয়েক শতাধিক নরনারীকে। সাথে ছিলো ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল শঙ্খ কাঁসার বাদ্য। এরপর রাতে অধিবাস সংকীর্তনের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে ২৪ প্রহর (দিবা-রাত্রি অবিরাম ৩দিন) নাম সংকীর্তন। সংকীর্তন শেষে সকালে গ্রামবাসী মিলে নগর কীর্তন করে সারা এলাকায় ঘুরে এসে মধ্যাহৃে ভোগরাগ কীর্তন শেষে মহোৎসবের আয়োজন করেন মন্দির কমিটি।
এবার ১৪ মার্চ সোমবার থেকে ২০ মার্চ রবিবার পর্যন্ত সাতদিন ব্যাপী শ্রীমদভগবদগীতা পাঠ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২১ মার্চ সোমবার অধিবাস সংকীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ২২ মার্চ মঙ্গলবার থেকে ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দিবারাত্রি অবিরাম চলবে নাম সংকীর্তন । ২৫ মার্চ শুক্রবার মধ্যাহৃে ভোগরাগ কীর্তন শেষে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে।
শ্রীশ্রী বাউল ঠাকুরের আখড়াধামে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সুজন বর্মন জানায়, এবার দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে সাতদিন ব্যাপী শ্রীমদভগবদগীতা পাঠ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সাথে আজ অধিবাস সংকীর্তন শেষে নাম সংকীর্তন অনুষ্ঠিত হবে। নাম সংকীর্তনে সাতটি দল নাম কীর্তন পরিবেশন করবেন । সংকীর্তন চলাকালীন আগত ভক্তদের জন্য দুপুর ও রাতের বেলায় প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে। ২৫ মার্চ শুক্রবার মধ্যাহৃে ভোগরাগ কীর্তন শেষে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে।