নরসিংদীর প্রতিনিধি
পারিবারিক দ্বন্দ্বে হামলার শিকার হয়ে সোহরাব হোসেন বাবু (২৬) নামে এক যুবক থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে ওল্টো তাকে আসামী করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি। সোহরাব হোসেন বাবুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ তথ্য জানা যায়। গত ২৮ মে শনিবার নিজ বাড়ীতে চাচা ও চাচাতো ভাইদের হামলার শিকার হন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা। ওইদিনই নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করতে গেলে থানার ওসি মো. ফিরোজ তালুকদার তার অভিযোগ গ্রহণ না করে সারা রাত থানায় আটকে রেখে সকালে প্রতিপক্ষের মামলায় আদালতে প্রেরণ করলে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে পাঠান।
ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী সদর উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দিনের ছেলে কুয়েত প্রবাসী নূরুল ইসলামের পরিবারের লোকজনের সাথে তার আপন ছোট ভাই নজরুল ইসলামের পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গত ২৮ মে সকাল ৯টার দিকে নূরুল ইসলামের বাড়ী পাশেই মেয়ে সাবিকুর নাহারের সাথে নজরুল ইসলামের স্ত্রী শিল্পি বেগমের তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শিল্পি বেগম সাবিকুর নাহারে উপর উত্তেজিত হয়ে মারতে উদ্যত্ত হয়। এ সময় হৈচৈ শুনে সাবিকুনের বড় ভাই সোহরাব এসে তাকে বাড়ীতে নিয়ে আসে। এঘটনায় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উদ্যোগী হয়ে বিষয়টি আপোষ মিমাংষা করে দেয়। দুপুর ২ টার দিকে নজরুল ইসলাম, তার স্ত্রী শিল্পি বেগম, ছেলে সোহানুর ইসলাম হৃদয় ও সৌরভ, একই এলাকার মিজান মিয়ার ছেলে সিয়ামসহ আরোও ৪/৫ জন লাঠি-সোটা নিয়ে প্রবাসী নূরুল ইসলামের বাড়ীতে অতর্কিত হামলা চালায়। দূর থেকে তাদের আসতে দেখে ঘরে থাকা নূরুল ইসলামের ছেলে সোহরাব ও মেয়ে সাবিকুন নাহার ও নাজমুন নাহার ভিতর থেকে দরজা- জানালার খিল লাগিয়ে দেয়। বাড়ীর ভিতর ঢুকে নজরুলের বড় ছেলে হৃদয় তার হাতে থাকা একটি কাঠ দিয়ে দরজায় ও জানালায় সজোড়ে আঘাত করতে থাকে। আঘাতের একপর্যায়ে জানালা খুলে গেলে নজরুলের ছোট ছেলে সৌরভ জানালা দিয়ে লাফিয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে। এসময় সে তার সাথে থাকা একটি চাপাতি দিয়ে ঘরের ভিতরে থাকা সোহরাবকে আঘাত করতে গেলে সে তা প্রতিহত করলে তা সৌরভের নিজের হাতে এসেই লাগে। এতে তার হাতের একটি আঙ্গুল কেটে যায়। এসময় অন্যান্য হামলাকারীরাও জানালা দিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে এবং হাতে থাকা লোহার রড ও লাঠি সোটা দিয়ে সোহরাব, সাবিকুন ও নাজমুন নাহারকে মারধোর করতে থাকে। একপর্যায়ে সিয়াম ঘরে ভিতর খাটে উপর শোয়া অবস্থা থেকে সাবিুকুনের ৪৫ দিনে নবজাতক সন্তানকে ছুড়ে ফেলে দেয়। এছাড়াও হামলাাকারীরা সাবিকুন ও নাজমুনের জামা কাপড় টানা হেছড়া করে ছিড়ে ফেলে শ্লীলতাানি ঘটায়। এসময় তাদের ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজনসহ স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল মিয়া এসে হামলাকারীদের ঘর থেকে বের করে দেয়। হামলায় ঘটনায় নূরুল ইসলামের ছেলে সোহরাব ও মেয়ে নাজমুন নাহার আহত হয়।
পরে তারা স্থানীয়দের সহায়তায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে থানায় অভিযোগ করতে গেলে সোহরাব হোসেন ও তার অপর ৩ বন্ধু রুবেল হোসাইন, তৌহিদুল ইসলাম শাওন, আবির ভূঁইয়াকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। এসময় সোহরাবের বন্ধুরা তাদেরকে আটকে রাখার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ জানায়, ওসি সাহেব ঘটনাস্থলে তদন্তে গেছে তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে রাত ১০ টার দিকে ওসি এসে ঘটনার সময় সোহরাবের বন্ধুরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ৩ বন্ধুকে চলে যেতে বলেন এবং সোহরাবকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানায়। বন্ধু সোহবারকে সাথে নিয়ে বাড়ী ফিরবে বলে তার বন্ধু রাত ১২ টা পর্যন্ত থানায় অপেক্ষা করার পরও তাকে ছেড়ে না দেওয়া হলে তারা বাড়ী ফিরে যান। পরদিন প্রতিপক্ষের দায়ের করা মামরায় বাদী সোহরাবকে আসামী বানিয়ে আদালতে প্রেরণ করে।
এদিকে ঘটনার পরদিন সোহরাবের বন্ধুরা ওসি ফিরোজ তালুকদারের সাথে সাক্ষাৎ করলে তাদেরকে তিনি তদন্ত সাপেক্ষে সোহরাবের পক্ষ থেকে মামলা গ্রহণ করা হবে বলে জানালেও ৪ দিন পর বুধবার তিনি তাদেরকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন।
এব্যাপার স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ওই ঘটনার তিনি একজন প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী। তিনিই সেদিন নজরুল ও তার দুই ছেলেসহ অন্যান্যদের নূরুল ইসলামের ঘর থেকে বের করে আনেন। তিনি বলেন, নজরুল ও তার লোজনের হামলার শিকার হন সোহরাব ও তার দুই বোন। হামলাকারীরা তাদের ঘরের জানালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে এবং তাদেরকে মারধোর করে।
ওসি মো. ফিরোজ তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নজরুলের লোকজনে আহতের বিষয়টি গুরুতর এবং তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় সেদিক বিবেচনায় তাদের মামলাটি নেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টির তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে মামলা নেওয়া হবে।