আন্তজার্তিক ডেস্ক
চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট- এই আট মাসে ১৫ জন নারীসহ ৪ শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে ইরান। আগস্ট মাসেই অন্তত ৮১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের ১১ জন বিশেষজ্ঞের একটি প্যানেল এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে এ তথ্য। খবর ভয়েস অব আমেরিকা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই অস্বচ্ছ এবং ত্রুটিপূর্ণ বিচারপদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে এবং লঘুপাপে গুরুদণ্ড দেয়া হয়েছে। যেমন, গত আট মাসে যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, তাদের অনেকেই ছিল মাদক সংক্রান্ত অপরাধের আসামি। তাদের বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মানা হয়নি। এমনকি এ সংক্রান্ত মিথ্যা মামলায় ফেঁসে যাওয়া নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে— এমন বেশ কয়েকটি নজির আমরা পেয়েছি। অনেককে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলনের দায়ে,’ বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের এই আট মাসে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৫ জন মহিলাও রয়েছে।মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা তীব্রভাবে বৃদ্ধিতে জাতিসংঘ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অন্য গোষ্ঠীগুলোর মতে, চীন ছাড়া অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় ইরান প্রতি বছর বেশি লোকের মৃত্যুদণ্ড দেয়।
ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং বিচারবহির্ভূত, সংক্ষিপ্ত এবং নির্বিচারে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে বিশেষ র্যাপোর্টারসহ জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গত মাসে ৪১টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে মাদক অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের। মাদক অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করে।
বিশেষজ্ঞরা ২০২১ সাল থেকে ইরানে মাদক সংক্রান্ত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শুধুমাত্র গত বছর ৪০০টিরও বেশি মাদক-সম্পর্কিত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে দেশটিতে। তারা আরো বলেছে, তারা যে রিপোর্ট পেয়েছে তাতে স্পষ্ট ইঙ্গিত করে ইরানে মৃত্যুদণ্ডের বিচার প্রায়ই যথাযথ প্রক্রিয়া পূরণ করতে ব্যর্থ।
কুর্দি প্রতিবাদী রেজা রাসাইয়ের মামলার ঘটনা ইঙ্গিত করে জাতিসংঘ জানায়, একটি অনুষ্ঠানে ইসলামিক রেভল্যুশন গার্ডস কর্পস সদস্যকে হত্যার দায়ে ৬ আগস্ট মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল রেজাকে, কিন্তু তিনি একটি চিহ্ন লিখেছিলেন ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা।’ তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে কথিত নির্যাতনের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে। সে সময় অন্য আসামিরা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য তাদের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ন্যায্য বিচার এবং যথাযথ প্রক্রিয়া মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের রিপোর্টের অর্থ হল যে মৃত্যুদণ্ড বর্তমানে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে প্রচলিত আছে তা বেআইনি মৃত্যুদণ্ডের সমান। তারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে নিরপরাধ ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতে পারে। এসব মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।