নিজস্ব প্রতিবেদক
ছাত্রীর সাথে পরকীয়া জড়িয়ে পড়া এক কলেজ শিক্ষক স্ত্রী ও প্রেমিকার মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠিয়ে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার এই ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে নরসিংদী শহরতলীর হাজীপুর মৌলভীপাড়া এলাকায়। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে আবদুল্লাহ আলী (২৮) নামে আত্মহত্যা করা ওই কলেজ শিক্ষকের লাশ নরসিংদী সদর উপজেলার হাজীপুর মৌলভীপাড়া এলাকায় তার বাড়ী থেকে উদ্ধার করা হয়। এই সময় ঘটনাস্থলে থাকা আবদুল্লাহ আলীর পরকীয়া প্রেমিকা তারই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আবদুল্লাহ আলী নরসিংদী মডেল কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক ও সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। সে তাঁর স্ত্রী সিরাতুন নাহার বর্তমানে পাঁচমাসের অন্তসত্ত্বা ও চার বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। পরকীয়া প্রেমিকা ওই ছাত্রী একই কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকায়।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়,স্ত্রী সিরাতুন নাহারের সাথে প্রথমে প্রেম পরে তাদের দুই বছরের এই প্রেমে সম্পর্ক গড়া পারিবারিকভাবে বিয়েতে। ২০১৭ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন আবদুল্লাহ আলী ও সিরাতুন নাহার। বিয়ের এক বছরের মাথা সিরাতুন নাহারের কোল জুড়ে একটি ছেলে সন্তান। এদিকে গতবছর থেকে আব্লদুল্লাহ আলী তারই কলেজের এক ছাত্রীর সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তাদের এই পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতে পারে স্ত্রী সিরাতুন নাহার। এ নিয়ে তিনজনের মধ্যেই দ্বন্দ্ব চলছিল।
ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর পুলিশ নিহতের স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিকা ওই ছাত্রীর কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে সেখানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন তাদের বরাত দিয়ে জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর ওই ছাত্রীর সাথে শিক্ষক
আবদুল্লাহ আলীর পরকীয়া ও শারীরিক সম্পর্ক আছে এমনটা স্ত্রী সিরাতুন নাহার জানতে পারেন। সপ্তাহখানেক আগে ওই ছাত্রীকে তারা স্বামী-স্ত্রী তিনজনে এক সমঝতা বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেন, সিরাতুন নাহার তাঁর স্বামী আবদুল্লাহকে ডিভোর্স দেবেন, অন্যদিকে এইচএসসি পাশের পর ওই ছাত্রীকে বিয়ে করবেন আবদুল্লাহ। এরপর থেকে সিরাতুন নাহার ছেলেকে নিয়ে রায়পুরায় বাপের বাড়িতে ছিলেন।
ওই ছাত্রী জানায়, গত মঙ্গলবার ছিল তার জন্মদিন। এ উপলক্ষে তার কয়েকজন সহপাঠীকে নিয়ে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে কেক কাটেন আবদুল্লাহ। পরে তাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলা হলেও সে তা না করে ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যায়। এ নিয়ে প্রেমিকার প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিল আবদুল্লাহ। পরদিন সকালে আবদুল্লাহ ‘আই এম ডেসট্রয়িং মাইসেল্ফ’ লিখে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্টোরি দেন। দুপুরে তাদের মধ্যে কথা হলে আবদুল্লাহ বলেন, ‘যা হইছে হইছে, তুমি আর আমার বাসায় আইসো না, লোক জানাজানি করারও দরকার নেই, আমি নিজেকে শেষ করে দিচ্ছি’। পরে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে স্ত্রী ও ছাত্রীকে একটি এসএমএস পাঠান আবদুল্লাহ আলী।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টার মাঝামাঝি কোন এক সময়ে আলমারি থেকে স্ত্রীর শাড়ি বের করে ঘরের সিলিং ফ্যানের ঝুলে গলায় ফাঁস দেয় কলেজ শিকক্ষক আবদুল্লাহ আলী। এদিকে এসএমএস পেয়েই ওই ছাত্রী তাঁর বাড়িতে চলে আসেন এবং তাঁর কক্ষের দরজা বন্ধ দেখতে পান। কিছুক্ষণের মধ্যে স্ত্রী সিরাতুন নাহারও বাপের বাড়ি থেকে ওই বাড়িতে চলে আসেন। দীর্ঘক্ষণ তাদের ডাক-চিৎকারের পরও দরজা না খোলায় পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় রাত ৯টার দিকে ওই কক্ষের দরজা ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় তাঁর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান তারা। পরে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফারিয়া আফরোজ ও নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
এদিকে দরজা ভেঙে ওই কক্ষে প্রবেশের পর পুলিশ আসার মধ্যবর্তী সময়ে মৃত ব্যক্তি, তাঁর স্ত্রী ও ওই ছাত্রীর তিনটি মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। কান্নাকাটির মধ্যে কে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই ছাত্রীর কাছের কেউ ঘটনাস্থলে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনটি ফোন কৌশলে লুকিয়ে ফেলেছেন। সকল প্রমাণ নষ্ট করে দেওয়ার জন্যই এই কাজটি করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে মোবাইল ফোন তিনটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
এব্যাপারে নরসিংদী মডেল কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম বলেন, রসায়নের শিক্ষক আবদুল্লাহ আলী একজন জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন। তার এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুতে আমরা কলেজ পরিবার শোকাহত। আমাদের কলেজেরই এক ছাত্রীর সাথে তাঁর সম্পর্কের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়ার কথা শুনেছি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফারিয়া আফরোজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চত করে জানান, একজন শিক্ষকের আত্মহত্যার খবর পেয়ে বুধবার রাত ১২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওই ছাত্রী আমাদের কাছে তাদের মধ্যে সম্পর্ক থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তদন্তের স্বার্থে ওই ছাত্রীকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয় হবে।