আবু সাইদ, গাজীপুর প্রতিনিধি
বীর মুক্তিযোদ্ধা আকাছ আলী। বয়স নব্বই ছুঁই ছুঁই। বসত ভিটার ১২ শতাংশ জমি শেষ সম্বল। একটি পুরনো মাটির ঘরের পাশের বারান্দায় তার বসবাস। যুদ্ধ করে দেশের ভাগ্য বদলালেও নিজের ভাগ্যের বদল হয়নি। স্ত্রী সন্তান নিয়ে কষ্টেই কেটেছে জীবন। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী শেষ হলেও দুঃখ ঘোচেনি তার। বসত ঘড় না থাকায় মানবিক জীবন যাপন করেন তিনি। আক্ষেপ বীর নিবাসের বাড়ি অনেক মুক্তিযোদ্ধা পেলেও তার ভাগ্যে জুটেনি।
ভোক্তভোগী বীরমুক্তিযোদ্ধা মো.আক্কাছ আলী (৮৭) গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বাপ্তা গ্রামের মৃত মো. ছোলমান শেখের ছেলে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাপ্তা গ্রামের নিবৃত পল্লীতে আক্কাছ আলীর বসবাস একটি পুরাতন মাটির ঘরের বারান্দার ছাপড়ার নিচে। নেই কোন দরজা ও জানালা। পুরো বারান্দা জুরে হাড়ি পাতিল সহ সংসারের জিনিস। এক পাশের চৌকিতে থাকেন তিনি। জরাজীর্ণ পুরাতন টিনের ছাউনি। বারান্দার চালা এত নিচু যে দাড়ানোর কোন উপায় নেই। বহুবছরের ধরে জরাজীর্ণ বারান্দার ছাপড়ার নিচে স্ত্রীকে নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে কথা হয় আক্কাছ আলীর সাথে। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন আক্কাস আলী। সহায় সম্বল বলতে রয়েছে বাবার রেখে যাওয়া ১২ শতাংশ ভিটে মাটি। বীরমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শেষ বয়সে সরকারি বীর নিবাসে থাকার আশায় ছিলেন তিনি। উপজেলায় ১২ টি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য বীর নিবাসের অনুমোদন হয়েছে। সেই তালিকায় নাম নেই তাঁর। জীবন সায়াহ্নে এসে বীর নিবাসে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
অসুস্থ মুক্তিযুদ্ধা মো: আক্কাস আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সময় তার বয়স ছিল ৩১ বছর। তখনই তিন সন্তানের পিতা। পরিবারের বাঁধা উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। মেজর এ কে এম সফিউল্লাহ এর নেতৃত্বে ৩ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। অনেকের ভাগ্য বদলেছে। তার ভাগ্য বদলায়নি।
সংসারে ২ ছেলে ৪ মেয়ে। অভাবের কারণে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করাতে পারেননি। বড় ছেলে হাবিবুল্লাহ রিক্সা চালক। ছোট ছেলে গরিবুল্লাহ বর্গাচাষী। দু’ছেলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে আলাদা থাকে। ৪ মেয়ে বিয়ে হয়ে গেছে। বার্ধক্য আর রোগাক্রান্তের কারণে কাজকর্ম করতে পারেন না। মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকাই তার একমাত্র আয়। ওষুধ কিনতেই শেষ হয়ে যায় সব। জীবন চলে খেয়ে না খেয়ে।
বীরমুক্তিযোদ্ধা আক্কাছ আলী আক্ষেপ করে বলেন, সব মুক্তিযোদ্ধার নামে রাস্তা হয়েছে। আমি বারবার আবেদন করলেও আমার নামে রাস্তার নামকরণ হয়নি। শুনেছি মুক্তিযোদ্ধারা বীর নিবাসে বাড়ি পাবে। সেই আশায় বাড়ির জন্য আবেদন করেছি। কমান্ডারের কাছে অনেক ঘুরেছি। জানতে পারলাম বীর নিবাসের বাড়ির তালিকায় আমার নাম নেই।
কাওরাইদ ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: মফিজ উদ্দিন মন্ডল বলেন, বীর নিবাসের জন্য মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস আলীর নাম পাঠানো হয়েছে। পরবর্তিতে হয়তো তিনি বীর নিবাসের বাড়ি পেতে পারেন।
শ্রীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মো: সিরাজুল হক বলেন, উপজেলার ১২ টি বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ দ্রæত শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার ৩২ টি বীর নিবাস নির্মাণ হবে। সেই তালিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস আলীর নাম রয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: তরিকুল ইসলাম বলেন, কিছুদিনের মধ্যে উপজেলার ১২ জন মুক্তিযোদ্ধার জন্য বরাদ্দকৃত বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার অনেক মুক্তিযোদ্ধারা বীর নিবাস পাবে।
তিনি আরও জানান, মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস আলীর বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।